পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ১ও কয়, ১ ভাগ ধানতঃ কয়েকট যুক্তি ও তাহার উত্তর প্রদর্শিত হইতে পারে। (১) ব্রহ্ম বাক্যমনের অগোচর, সুতরাং তাহার উপাসনা অসম্ভব এবং এই কারণে রূপগুণবিশিষ্ট কোন বস্তুকে জগতের কর্তা বলিয়া উপাসনা করা কর্তব্য । ইহার উত্তরে এই বলা যাইতে পারে যে, যদি কোন ব্যক্তি বাল্যকালে পিতৃহীন হয়, সে যেমন সম্মুখস্থ যে কোন বস্তুকে পিতা বলিয়া গ্রহণ করে না কিন্তু পিতার উদেশে কৰ্ম্ম করিবার কালে এই বলিয়া কৰ্ম্ম করে যে, “যিনি আমার জন্মদাতা, তাহার উদ্দেশে কৰ্ম্ম করিতেছি”, সেইরূপ ঈশ্বর বাক্যমনের অগোচর হইলেও আমরা তাহাকে জগতের স্রষ্টা পাতা বলিয়া উপলব্ধি করিতে পারি এবং তাহার উপাসনাও করিতে পারি । (২) পিতৃপিতামহগণ যে মতানুসারে কাৰ্য্য করিয়া এতকাল কাটাইয়াছেন, তাহ। ত্যাগ করা আমাদিগের পক্ষে কি শোভা পায় ? ভাল হউক, মন্দ হউক, কেবল পূৰ্ব্ব পুরুষেরা এক প্রথা পালন করিয়া গিয়াছেন বলিয়া নির্বিচারে স্বীকার করা মনুষ্য-ধৰ্ম্মের বহিভূতি । আমরা সদসৎ বিচার করিবার জন্য পরমেশ্বরের প্রসাদাৎ বুদ্ধিবৃত্তি সকল লাভ করিয়া পশুদিগের অপেক্ষা উন্নত পদে উঠিয়াছি—মনুষ্য নামের গৌরব লাভ করিয়াছি । আমরা সেই বুদ্ধিবৃত্তির এতটুকুও পরিচালনা না করিয়া নিতান্ত নিশ্চেষ্ট অলসভাবে পশুদিগের ন্যায় জীবন যাপন করিব ? অার ইহাও তো তামা দিগের মধ্যে দেখা যায় যে, কেহ শাক্ত ছিলেন, বৈষ্ণব হইলেন, কেহ বৈষ্ণব ছিলেন, শাক্ত হইলেন ; কেহ মূৰ্ত্তিপূজার পক্ষপাতী ছিলেন, পরমহংস হইয়া ব্রহ্ম م-چسے জ্ঞানের উপদেশ দিতে লাগিলেন। ইহাতে আমরা দেখিতেছি যে বিচার পূর্বক যাহ। ভাল বলিয়া বিবেচনা হইবে, তাহা গ্রহণ করায় কোন দোষ নাই— প্রত্যুত তাহাতেই আমাদিগের মনুষ্যত্ব । “যুক্তিহীনবিচারেণ ধৰ্ম্মহানিঃ প্রজায়তে” অযৌক্তিক বিচারের দ্বারা ধৰ্ম্মহানি হয় । (৩) অনেকে বলেন যে, সংসারীর পক্ষে ব্রহ্মজ্ঞান হইতে পারে না, কারণ সংসারীর অন্তরে স্থ ও কু-য়ের ভেদজ্ঞান থাকে—পঙ্ক চন্দনে অভেদজ্ঞান হয় না । এই তর্ক অতি অসম্ভব ও অযৌক্তিক । এই ভেদজ্ঞান না থাকিবে কেন ? ঈশ্বর আমাদিগের অন্তরে এই প্রকার পার্থক্যজ্ঞান দিয়াছেন । পূৰ্ব্বতন ঋষিদিগের কথা ভাবিয়া দেখ, তাহারা ব্রহ্মজ্ঞানী হইয়াও জলকে জলের কার্য্যেই ব্যবহার করিয়াছিলেন, অগ্নিকে অগ্নির কার্য্যেই ব্যবহার করিয়াছিলেন ; জলকে অগ্নি বলিয়া অথবা অগ্নিকে জল বলিয়া ব্যবহার করেন নাই । আর এক কথা এই যে, যদি কোন কল্পিত দেবতাকে জগতের কর্তা বলিয়া পূজা করিলে পঙ্ক-চন্দনে সমজ্ঞান হয় না, তবে ব্রহ্মকে জগতের কৰ্ত্তারূপে পূজা করিলেই বা কেন ঐরুপ ঘোর অনিষ্টকর অভেদজ্ঞান হইবে ? ব্রহ্মজ্ঞানীর সমদৃষ্টি এইরূপ নহে। তবে তাহ কি, না, সৰ্ব্বভূতে আত্মদৃষ্টি; অর্থাৎ যে প্রকার আচরণে আমার কষ্ট হয়, অন্যের প্রতি সে প্রকার আচরণ মা করা ইত্যাদি । নিজের দুঃখে যেমন আমার হৃদয়ে কষ্ট হয়, সেইরূপ অন্যের দুঃখ দেখিলেও আমার হৃদয় ব্যথিত হইবে ; নিজের সুখে যেমন আমার হৃদয়ে আনন্দ হয়, সেইরূপ অপরের সুখেও আমার হৃদয় আনন্দ অনুভব করিবে—কারণ আমরা সকলেই সেই