পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্র ৮১৪ বৈদান্তিক প্রমাণতত্ত্ব b"δ) তাহা হয় না । ইহাতে বুঝিতে হইবে যে, পারিমাণাকার বৃত্তি হয় নাই বলিয়াই পরিমাণ প্রত্যক্ষ হয় নাই । যে স্থলে চিত্ত বিষয়াকারাকারিত হয় সেই স্থলেই বিষয়ের প্রত্যক্ষ হয়। রূপাকার বৃত্তিকালে পরিমাণাকার বৃত্তি হয় নাই, বৃত্তি না হওয়াতে পরিমাণের সত্তা প্রমাতৃসত্তা হইতে পৃথকভূত থাকিয়া যায়, খৃথক্ভূত থাকাতেই পরিমাণ আত্মচৈতনোজ্জলিত অন্তঃকরণ বৃত্তির অপ্রকাশিত থাকে। যে বস্তু যেরূপ, মন ঠিক সেইরূপ ব৷ তদাকার প্রাপ্ত হওয়ার নাম বৃত্তি এবং বৃত্তিরই অন্য নাম জ্ঞান । বৃত্তি হওয়াই যদি প্রত্যক্ষের কারণ হয় এবং বৃত্তি না হইলে যদি বিজ্ঞেয় পদার্থ অজ্ঞাত থাকে, তাহা হইলে বৃত্তিরও বৃত্তি হওয়া আবশ্যক। নচেৎ বৃত্তি প্রত্যক্ষ হইবেক না । তাহা অজ্ঞাত থাকিবেক । কিন্তু জ্ঞানের জ্ঞান হওয়া সৰ্ব্ববাদিসম্মত । (জানা হইয়াছে, এইরূপ অনুভবই জ্ঞানের জ্ঞান। বৃত্তিজ্ঞান সকল মূল চৈতন্যাত্মক সাক্ষীর জ্ঞেয় হয় বলিয়। ঐরপ অনুভব বা জ্ঞানের জ্ঞান হইয়া থাকে ) জ্ঞানের জ্ঞান ও বৃত্ত্যাকার বৃত্তি সমান কথা । যদি বৃত্তি বা জ্ঞান জানিবার জন্য বৃত্ত্যন্তরের (জ্ঞানান্তরের) অপেক্ষ থাকে, তাহা হইলে সে বৃত্তি জানিবার জন্যও অন্য বৃত্তির জন্ম স্বীকার করিতে হইবে । তাহা করিলে এক বৃত্তি জানিবার জন্য অন্য বৃত্তি, পুনরপি সে বৃত্তি জানিবার জন্য অন্য বৃত্তি, এইরূপ অনন্ত প্রবাহ উপস্থিত হইবে এবং সে প্রবাহ অনবস্থা নামক দোষ । অনবস্থা দোষ প্রকৃত তত্ত্ব বুঝিবার বাধা জন্মায় । যদিও অনবস্থাভয়ে বৃত্তিবিষয়িণী বৃত্তি অস্বীকার করি, করিলেও জ্ঞানপ্রত্যক্ষে স্বাকাররক্ত পিহিতত্বঘটিত প্রত্যক্ষ লক্ষণ নাই SMSMSMSM MS MS MSTSMSMS বা থাকে না, এ কথা বাচ্য নহে। কারণ, বৃত্তির বৃত্ত্যন্তর প্রকাশ্যতা (জ্ঞানের জ্ঞানাস্তর প্রকাশ্যত) অস্বীকার করিলেও কিংবা না থাকিলেও স্বপ্রকাশ্যতা থাকায় জ্ঞানপ্রত্যক্ষেও স্ববিষয়ক বৃত্ত পিহিতত্ব ঘটিত লক্ষণ সঙ্গত হইতে পারে। অন্তঃকরণ ও অন্তঃকরণনিষ্ঠ ধৰ্ম্মনিচয় কেবল সাক্ষিবেদ্য (সাক্ষী চৈতন্যের প্রকাশ্য) সুতরাং সে সকলের তদশ রূপ। বৃত্তি উদ্ভবের অপেক্ষ নাই । তাহ যখন নাই, তখন আর অনবস্থাদোষ ও লক্ষণের অব্যাপ্তিদোষ হইবে কেন ? অন্তঃকরণ ও অন্তঃকরণের ধৰ্ম্মজ্ঞানাদি কেবল সাক্ষিবেদ্য—সাক্ষিচৈতন্যের বা মূল-আত্ম-চৈতন্তের প্রকাশ্য— এ কথার অর্থ বা তাৎপর্য অন্য কিছু নহে, চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের ও অনুমানাদি প্রমাণের বিনা সাহায্যে অর্থাৎ ঐ সকলের দ্বারা বুজুম্ভব না হইয়া প্রকাশ প্রাপ্ত হও য়াই সাক্ষিবেদ্য কথার অর্থ। আচাৰ্য্য শঙ্কর স্বামী প্রভৃতি বলিয়া গিয়াছেন যে, নিরুপলক্ষ্যে অর্থাৎ বিনা ইন্দ্রিয়াদির ব্যাপারে “অহং-আমি” ইত্যাকার অন্তঃকরণ-বৃত্তি উদ্ভূত হইতেছে। (অহংবৃত্তিযুক্ত অন্তঃকরণ মূল-আত্মচৈতন্যের ভাষ্য, বিষয় বা প্রকাশ্য হইতেছে ) সৰ্ব্বজ্ঞ মুনি প্রভৃতি সাম্প্রদায়িকগণও প্রাতিভাসিক রজতস্থলে (প্রাতিভাসিক-ভ্রাস্তিসমুদ্ভূত) রজতাকারা অজ্ঞানবৃত্তি হওয়ার কথা বলিয়া গিয়াছেন । এ সকল সত্তে সাক্ষিবেদ্য (মাত্র আত্মচৈতন্যের প্রত্যক্ষযোগ্য) অন্তঃকরণ ও অন্তঃকরণনিষ্ঠ ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম প্রভৃতিতে উক্ত প্রত্যক্ষ লক্ষণ অব্যাপ্ত হইবার নহে । সমুদায় কথার সার সংগ্রহ এই যে, অন্তঃকরণ সেই সেই পদার্থের আকারে আকারিত অর্থাৎ তদাকারে পরিণত হইলে তাহা “স্বাকার-বৃত্তি” নামে অভিহিত হয় ।