পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দশম কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ ১৮৯২ বাহিনী, কিন্তু তাই বলিয়া যে চিন্ত। অনন্তে প্রবেশ করিতে পারে না, একথা স্বীকার করি না ; বরং আমরা বলি যে চিন্তা এই প্রকৃতি-বিশিষ্ট বলিয়াই আমরা অনন্তের জ্ঞান লাভ. করিতে বাধ্য। চিন্তু যদি নিত্য-দ্বিত্ব-বাহিনী ন হইত, তবে কখনও আমরা অনন্তের ভাব পাইতে পারিতাম ন। একথা দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝাইব । তোমীর চক্ষুর সম্মুখে একটা পদার্থ রাখিলম, তোমার কি এমন শক্তি অাছে যে তাহার চতুঃপাশ্ববর্তী সেই স্থামের অনন্ত বিস্ত তির ভাব দূরে রাখিয়া তুমি ঐ পদার্থের চিন্তা করতে পার ? না । চক্ষু মুদিত কর, ঐ পদার্থও যেমন তোমার মনে জাগিবে, সেই অসীম স্থানও তেমনি জাগিবে, ঠিক একই মুহূৰ্ত্তে ঐ দেখ তোমার গৃহপ্রাচীরস্থ ঘটিকা-মন্ত্র টিক্‌টিক্‌ করিম্ভেছে— কি কহিতেছে —‘‘সময় ঘাইতেছে । ” আচছ বল দেখি “সময় যাইতেছে" একথার অর্থ কি ? অবশ্যই বলিবে, “এমন কিছু, যাহার অনাদিত্বে ও অনস্তুত্বে আমি বিশ্বাস করিতে বাধ্য” – কেন না, সময়ের আদি অধৰু অন্ত আছে, অর্থাৎ এমন সময় ছিল যখন সময় ছিল না! অথবা এমন সময় হইবে যখন সময় থাকিবে না। ইহা কি কেহ মনে করিতে পার ? --“তাহার অংশ যাইতেছে।” স্থতরাং তুমি ঐ ঘটিকা-যন্ত্রের ‘টিক্‌টিকৃশুধু সেই অনন্ত কাল-সাগরের ক্ষুদ্র উৰ্ম্মিমালা রূপেই মনে করিতে পার । এক হইতে অন্য বিযুক্ত করিতে পার না । তাই বলি যে চিন্ত নিত্য-দ্বিত্ব-বাহিনী অথবা সম্বন্ধনিৰ্দ্ধারিণী বলিয়া উহ। অমাদিগের অনস্তের জ্ঞান-পথের পরিপন্থী নহে, অপর পক্ষে উক্ত রূপ বলিয়াই তৎপর্থের একমাত্র নেত্রী। যদি বল এই অনন্তের জ্ঞান পরিষ্কার মহে, আমি জাগিবে । তাজ্ঞতাবাদ সমালোচন (t দৈর্ঘ্য ও বিস্তার পরিমাণ করিতে পার না, তৎসম্বন্ধীয় জ্ঞান মাত্রকেই যদি অপরিস্কার বল, তবে অনন্তের জ্ঞান অপরিস্কার হইতে পারে । যাহার চিন্তা অন্য সমস্ত বিষয়ের চিন্তু হইতে ভিন্ন প্রকৃতি, যাহা তর্কে ও ভাষায় স্বীয় স্থান রক্ষা করিতে পারে, তাহাই পরিষ্কার চিন্তা ; এবং একথা সত্য হইলে তোমার সম্মুখস্থ কোন বস্তুর চিন্ত৷ হইতেই তোমার অনন্তের চিন্ত অপরি কীল নহে । তোমার আর এক কথ} আছে । তুমি বলিতে পার, “অনন্ত সম্বস্বীয় এ সমস্তকে পরিস্কার চিন্ত বলিতে পারি, কিন্তু জ্ঞান সংজ্ঞা প্রদান করিতে পারি ন৷ ৷ ” যদি দৃশ্যমানের মধ্যে একটা হইতে অন্যটার নিদর্শনকেই শুধু জ্ঞাম নাম দেওয়৷ যায়, অর্থাৎ যদি সেই দৃশ্যমান সমূহ ও তাহাদিগের অtধার এতদুভয়ের এক হইতে অন্যের মিৰ্ব্বাচন জ্ঞান না হয়, তবে তোমার কথার মূল্য আছে । কিন্তু চিন্তা করিলে দেখিতে পাইবে যে তোমার জ্ঞান-সংজ্ঞ। নিতান্ত অযৌক্তিক । তোমার সংজ্ঞানুসারে তুমি বলিতে পার, “আমি চন্দ্রকে তারাগণ হইতে ভিন্ন পদাৰ্থ বলিয়। জানি, কিন্তু চন্দ্রকে তাহার চতুঃপার্শ্ববৰ্ত্তী স্থান হইতে বিভিন্ন বলিয়া জানি না, কেন না সেই স্থানই চন্দ্র ও তারক। এতদুভয়ের অধীর । ” “আমি আমার স্বর্গগত পিতামহের জীবন আমার নিজের জীবন হইতে বিভিন্ন বলিয়া জানি, কিন্তু সেই অনন্ত কাল-সাগর হইতে বিভিন্ন বলিয়া জানি না, কেন না সেই অনন্ত কালসাগরই আমার ও আমার পিতামহের জীবনের সাধারণ আধার ৷ ” এতদপেক্ষ অযৌক্তিক আর কি হইতে পারে ? ইহা যে শুধু প্রচলিত ভাষা ও সহজ বুদ্ধিরই শক্ৰ এমন নহে, ইহা আত্মহত্য-পাপে কলঙ্কিত, বলিব সে তোমার ভ্রান্তি ! তুমি যাহার কারণ, দৃশ্যমান-গণের সাধারণ আধার হইতে