পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯২ তত্ত্ববোধিনী পত্রিক ১২ কল্প ও ভাগ 之、二 সঙ্গে রহিয়াছ ; তোমারি যষ্টি এবং তোমারি দণ্ড আমাকে সুখ এবং শান্তি প্রদান করে ।” স্তন্যজীবী শিশু যেমন সামান্য কাঠখণ্ড তুলিতে অক্ষম, সে যেমন বৃহৎ ‘মাজ তুলিতে পারে না, তেমনি যাহার বিশ্বাস সামান্য বিষয়ে চঞ্চল, বিশেষ পরীক্ষা স্থলে তাহার ভঙ্গপ্রবণ বিশ্বাস চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া যাইবেই যাইবে । আঘাৎমাত্রে মুম্ময় পাত্রের ন্যায় অবিশ্বাসী বিনষ্ট হয় । কিন্তু আহত হইলেও, ধাতুপাত্রের ন্যায়, বিশ্বাসীর আত্মা চইতে উপহাসসুচক মধুর হাস্যধ্বনি উত্থিত হয়। বিশ্বাস এমনই বস্তু যে, তাহার এক কণামাত্র থাকিলেই বিশ্বাসী পৰ্ব্বতাকার বাধা বিঘ্ন অনায়াসে অতিক্রম করিতে পারেন । যিনি বিশ্বাসের অগ্নিময় পরীক্ষা উত্তীর্ণ ও বিগতক্লেদ হইয়া তপ্তকাঞ্চনের ন্যায় সুন্দর এবং উজ্জ্বল জীবন লাভ করিয়া বিশ্বাস-রত্বে ভূষিত হইয়াছেন, তিনি মানব হইলেও দেবগণের সভাতে উপবেশন করিবার উপযুক্ত । বিশ্বাসীর আত্মা রত্নাকর সদৃশ। প্রার্থনাযোগে প্রাণ-সমুদ্রে নিমগ্ন হইবামাত্র, তিনি যথাভিলষিত ধন রত্ন লাভ করেন । সংসার-সাগরে বিশ্বাসীর জীবন সমুদ্রতীরস্থ আলোক-গৃহের জ্যোতিঃস্বরূপ বিপথগামী জীবনতরগুলিকে অকূল জলধিতে সুপথ প্রদর্শন করে । তরুলতার এক একটী পল্লব ঝরিয়া যেমন মূলদেশের মৃত্তিকাকে উর্বর করে, তেমনি বিশ্বাসমূল জীবনতরুর এক একটা দিবস চলিয়া যাইলে,তাহার স্মৃতি আত্মাকে অধিকতর উর্বর করে। জীবনবৃক্ষ এই স্মৃতিরূপ সার লাভ করিয়া পূর্বাপেক্ষা অধিকতর সতেজ ও বৰ্দ্ধনশীল হইতে থাকে | ধৰ্ম্মজীবনের শৈশব কালে মানব আত্মা বিশ্বাসের “দোলনার” উপর শাস্তিতে নিদ্রা যাইতে পায় না, কত ভীষণ শব্দ ও স্বপ্ন শান্তি নষ্ট করিয়া দেয় । ফাস্তুনের শান্তসলিলা জাহ্লবীর সুনিম্মল স্রোতে অবগাহনকালে সম্মুখ হইতে হঠাৎ যেমন শিশুমার উদিত হয়, সেইরূপ বিশ্বাস-জীবনের শৈশবাবস্থাতে জীবনস্রোত নীরবে, ও প্রশান্ত, সুন্দর এবং নির্বিঘ্ন ভাবে বহিতে বহিতে, সময়ে সময়ে আমাদের অসতর্কত প্রযুক্ত অজ্ঞাতসারে হঠাৎ সংশয় ও অবিশ্বাস উদিত হয় । তাহার সঙ্গে সঙ্গে শুষ্কতা আসিয়া প্রাণকে নীরস করে, এবং অজ্ঞান আসিয়া বিবেককে তিমিরাচ্ছন্ন করে । জীবনের এই অংশকে বৃদ্ধ কবি হোমার বর্ণিত একিলিসের উরুসন্ধিস্থ দুর্বল ছিদ্র বলা যাইতে পারে। মহাধৰ্ম্মবীরও জীবনের এইরূপ স্থলে প্রলোভন কর্তৃক সাংঘাতিকরূপে বিদ্ধ হইতে পারেন । এই সময়েই আশা এবং ঈশ্বরের পূর্ব কৃপার স্মৃতি দুৰ্বলজানু, বিচলিতচিত্ত মানবকে দণ্ডায়মান হইবার সামর্থ্য প্রদান করে । শাণিতক্ষুরধারসদৃশ দুর্গম ধৰ্ম্মপথে বিচরণ কালে অগ্রপশ্চাৎ দৃষ্টি পূর্বক চলিলে এই প্রসারিতমুখ শিশুমারের ভীষণ কবল হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। অতীত জীবনের স্মৃতি ভবিষ্যতের অন্ধকাররাশির মধ্যে আশাশুকের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া দেখাইয়া দেয় যে, ক্ষণকাল ধৈর্য্যাবলম্বন পূর্বক স্থিরভাবে রহিলে দুঃখবিভাবরী চলিয়া যাইবে এবং সুখপ্রভাতের কিরণচ্ছটা অবিশ্বাসতিমিররাশি বিদূরিত করিবে ।