পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ . তত্ত্ববোধিনী পত্রিক ' »* कछ, 8 छ?' মনুষ্যের চক্ষু ফুটাইয়া দেয়—প্রকৃতি মনুস্যকে নূতন কিছুই দিতে পারে না। অাত্মার ভিতরে যাহা নাই এমন কোনো নূতন সমাচার প্রকৃতি আত্মাকে অবগত করিতে পারে না । তবুও সূর্য্য চন্দ্র ওষধি বনস্পতি কেহই এক নিমেষের জন্য ও নীরব নহে । সূৰ্য্য যেরূপ অপরাজিত উদ্যমে পরমাত্মার মঙ্গল মুখজ্যোতি জীবাত্মার নিকটে ব্যক্ত করিতেছে—তাহা ছাড়া আর কিরূপে কে তাহ ব্যক্ত করিবে ? পূর্ণিমার চন্দ্র, বসন্তের বনশ্ৰী, কোকিলের কণ্ঠ-ধ্বনি,পুষ্প-লতার লালিত্য এবং সেকুমাৰ্য্য র্তাহার মধুর সৌন্দৰ্য্য যেরূপে ব্যক্ত করিতেছে—তাহা ছাড়া আর কিরূপে কে তাহা ব্যক্ত করিবে ? জগতের শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায় ভীষণ বজ বিদ্যুৎ তাহার মহতী শক্তির ইঙ্গিত মাত্র ব্যক্ত করিয়াই ক্ষান্ত হইতেছে—তাহা ছাড়া আর কিরূপে কে তাহ ব্যক্ত করিবে ? প্রকৃতির এই যে অবিশ্রান্ত চেষ্ট—ইহা কিসের চেষ্টা ? প্রকৃতি নানা রাগে, নানা ছন্দে নানা কে|শলে কেবল এই কথাটি মনুষ্যকে বুঝাইয়। দিবার জন্য চেষ্ট। করিতেছে যে, তাহার অভ্যন্তরে সর্বশক্তিমান ন্যায়বান রাজাধিরাজ, বরাভয়দাতা মঙ্গলদাতা করুণাময় জনক জননী, সৰ্ব্ব-সন্তাপহারী প্রেমময় প্রাণসখী জাগ্ৰত জীবন্ত রহিয়াছেন । এই যে গভীর প্রাণের কথা ব্যক্ত করিতেছে, সূর্য্যের উদয় হইতে সূর্য্যের অস্ত পৰ্য্যন্ত, বৎসরের আদি হইতে বৎসরের শেষ পর্য্যন্ত, মহান প্রভু দীনবন্ধু বিশ্ববিধতার মহিমা-গানে দিক বিদিক মন্ত্র-মোহিত করিতেছে ;—আমরা যদি মনুষ্য হইয়৷— অমৃতের পুত্র হইয়া—তাহা শুনিতে না পাই তবে আর কে তাহা শুনিবে ? প্রস্তর তা স্থার প্রতি বধির ! পাষাণ তরু লতা পুষ্প পল্লবের কি কর্ণ আছে যে, তাহারা তাহ শুনিবে ? না পশু পক্ষীর রাগ-রাগিণী-বোধ আছে যে, তা- ৷ হার তাহার গভীর মৰ্ম্মরস আস্বাদন ক রিবে ! হায়! মনুষ্যের মধ্যেও অনেকেই কিন্তু যে কোনো শুভ মুহুর্তে যে মনুষ্য যখনই তাহ শুনিতে পায়, তখনি তাহা তা চার কর্ণে কত যেন যুগ-যুগান্তরের চির-পরিচিত জন্ম-ভূমির অৰ্দ্ধ-স্বল্ট স্বগীয় সমাচার আনয়ন করিয়া তাহার প্রাণের নিভৃত প্রদেশে বিন্দু বিন্দু সুধাবারি সিঞ্চন করিতে থাকে । যে মনুষ্য অকৃত্রিম সরল স্বৰ্গীয় প্রকৃতির মুখে পরমারাধ্য পরম-দেবতার গুণ-সঙ্কীৰ্ত্তন শুনিয়াছে—তাহার কর্ণে তার কোনো সঙ্গীতই ভাল লাগে না ; যে মনুষ্য সত্য সুন্দর মঙ্গল পুরুষের অস্ফুট প্রেমমুখচ্ছবি যবনিকার আড়ালে একবার দেখিয়াছে— তাহার চক্ষে বাহিরের কোনো সৌন্দর্য্যই ভাল লাগে না । সেই মূলুয্যের অন্তঃকরণ হইতেই এইরূপ গগন-ভেদী খেদোক্তি ধ্বনিত হইয়া উঠে যে “দো বৈ ভূম। তৎসুখং নাল্পে সুখমস্তি, ভূমৈৰ সুখং ভূমাহেব বিজিজ্ঞাসিতব্যঃ” । যাহা ভূমা তাহাই সুখ, অল্পে সুখ নাই, ভূমই সুখ, ভূমাকেই জানিতে ইচ্ছা কর । পশু-পক্ষীদিগের কি ? অল্প লইয়া তাহারা কিন্তু নিখিল-বিশ্বময়ী প্রকৃতি অষ্ট প্রহর । প্রগাঢ় সন্তোষে কাল-যাপন করিতেছে ! অল্পেই তাহীদের পরম স্থখ ; যাহা অল্প নহে তাহা তাহাদের কিছুই নহে ! পশু পক্ষীদিগের চারি-দিকে জড়তা এবং মূঢ় তার অভেদ্য প্রাচীর সমুখিত রহিয়াছে ; সেই প্রাচীরের সংকীর্ণ পরিধির অভ্যন্তরে তাহারা স্বস্ব স্বভাবোচিত পুর্ণতা অবলীলাক্রমে উপার্জন করে এবং তাহার বাহিরে তাহার একবারও উকি দিয়া দেখে না !