পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২ নাই ক্ষীণ দুর্বল ও আসাঢ়, সৰ্ব্বশরীর কঙ্কালাবশিষ্ট হিমকরকাবৎ শীতস্পর্শ এবং মৃত্যুগন্ধে লিপ্ত, অল্পমাত্র চেতনা আছে কিন্তু বাক্য নাই, অন্তগুঢ় গভীর আবেগ এক একবার হৃদয় স্ফীত করিয়া তুলিতেছে এবং চক্ষু দিয়া বাষ্পাকারে বাহির হইতেছে, নাড়ী চ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন, কখন অনুভূত কখন বা অননুভূত এবং শরীরব্যাপী ক্ষীণ প্রকৃতি চির-পরিচিত পলায়নোন্মুখ প্রাণকে রাখিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছে, তার উপর আবার শিরায় শিরায় সঙ্কোচনের দুর্বিষহ যন্ত্রণা এবং সাঙ্ঘাতিক শ্লেষ্মার কণ্ঠনলী অবরোধ চেষ্টা । প্রণিধান পূর্বক দেখিলে বুঝিতে পরিবে বিপ্লবের বিষম উৎপাত আমাদের মুম্ষুণ্ণ সমাজদেহে বাস্তবিকই এই রূপ দশা আনিয়াছে । কিন্তু প্রাণান্তিক রোগে বৈদ্যের ভগ্নহৃদয়ে একপ্রকার মুষ্টিযোগের ব্যবস্থা করিয়া থাকেন । এ ক্ষেত্রেও সেই প্রকার মুষ্টিযোগের ব্যবস্থা আবশ্যক । তন্মধ্যে প্রথম হৃদয়যোগ । মনে কর যখন পূৰ্ব্বজ্ঞানের কোন একটা ভাণ্ডার নাই সেই সময় মনুষ্য অচিন্ত্যরচনা বিশ্বকে দেখিয়া অন্তস্ফূর্ত উচ্ছাসে যে সকল ফুল ফুটাইয়। গিয়াছে যুগ যুগান্তের কত রাষ্ট্রবিপ্লবের পরও সেই পুষ্পের সেই কান্তি সেই গন্ধ যেন নূতন রহিয়াছে । তদ্বারা আকৃষ্ট হইয়া তোমরা তাহাদের সেই গভীর উচ্ছাসে নিজের উচ্ছসি মিশাইয়া দেও এবং সেই প্রগাঢ় আনন্দে আত্মবিস্মৃত হইয়া যাও—ইহা হৃদয়যোগ । দ্বিতীয় ইতিহাসযোগ । মনে কর সেই আদিকালের দুরন্ত শীত বাতাতপের মধ্যে প্রচণ্ড হিংস্র জন্তুতে পরিবৃত হইয়া লোকে নিরলঙ্কার সরল কথায় যে সকল সত্য ব্যক্ত করিয়া গিয়াছে আজ এই छान বিজ্ঞানের তীব্র আলোকে প্রকৃতির. সকল প্রকার কঠোরতা হইতে সুরক্ষিত নির্বিল্প সময়ে সেই সমস্ত সত্যই আপনাদের উপজীব্য করিয়া লও। ইহা স্মরণ- “ তীত অতীতের সহিত বর্তমানের সুন্দর ও গঢ় যোগ—ইহাই ইতিহাসযোগ । তৃতীয় সমাজযোগ। অনেকের সংস্কার বর্তমান মনুষের সমষ্টিই মনুষ্য সমাজ । কিন্তু ইহা ঠিক্‌ নয় । মনুষ্যের নানারূপ চিন্তার ঘাত-প্রতিঘাতে যে একটা ভাব বা প্রকৃতি রূঢ়মূল হয় তাহার সহিত যে মনুষ্যসমষ্টি তাহাই প্রকৃত মনুষ্য সমাজ । সমাজের এই প্রাণটিকে ছাড়িয়া কোন সমাজই প্রকৃত সমাজ হইতে পারে না । বল দেখি মনুষ্য বলিতে আমরা কি বুঝি ? আমরা কি একটা মুখ-চক্ষুনাসিকা-বিশিষ্ট জীপমাত্রকে মনুষ্য বুঝি ? না তাহার সহিত ভক্তি শ্রদ্ধা স্নেহ দয়া প্রভৃতি আধ্যাত্মিক প্রকৃতিকে মনুষ্য বলিয়া বুঝি ? যদি তাই মনুষ্য হয় তবে মনুষ সমাজের পক্ষে এই মূল নিয়মের ব্যভিচার কেন । নানা রূপ চিন্তার ঘাত প্রতিঘাত-সমুথিত ভাবের বা প্রকৃতির সহিত যে মনুষ্যসমষ্টি প্রকৃত পক্ষে তাহাই মনুষ্যসমাজ । এখন দেখা উচিত, এই যে চিন্তার ঘাত-প্রতিঘাতজ প্রকৃতি ইহার মূল কি বর্তমানে বদ্ধ না অতীতের গভীরে প্রসারিত ? অবশ্য ইহা সকলেই জানেন যে বর্তমানে আমাদের জ্ঞানের অধিকাংশই পূর্বপরম্পরাগত জ্ঞান । আমরা সেই গুলিকে কেবল ব্যবহারে আনি মাত্র । সামাজিক ভাব বা প্রকৃতিই বল এই সূত্রে তাহা দাড়াইয়া যায়। সুতরাং যখন মনুষ্য সমাজ বলিতে মনুষ্য সমষ্টির সহিত সেই সামাজিক প্রকৃতি লক্ষিত হয় তখন ইহা স্থির সিদ্ধান্ত যে