পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৩ আমাদের চক্ষে জ্ঞানালোক বর্ষিত হইতেছে আজিও কি আমাদের চক্ষু ফুটিবে না ? সত্য কি এতই নিস্তেজ এবং নিবীৰ্য্য! মিথ্যা কি এতই প্রবল পরাক্রম বিশ্বাধিপতি ? কখনই না ! “সত্যমেব জয়তে নামৃতং” । এইরূপ আমরা দেখিতেছি যে, ব্রহ্মোপাসনাতে আমাদের জ্ঞান পরি: তৃপ্ত হয়, প্রীতি ভক্তি চরিতার্থ হয়, আত্মার অভ্যন্তরে মুক্তির পথ উন্মুক্ত এবং প্রসারিত হইয়া যায়, আমাদের দেশের প্রাচীন আরণ্যক ঋষিদিগের তাহাই মুখ্য মন্তব্য এবং বর্তমান জ্ঞানোজ্জ্বল শতাব্দীর তাহাই সৰ্ব্বপ্রকারে উপযোগী । ব্ৰহ্মজ্ঞান এবং ব্রহ্মোপাসনা যখন এইরূপ পরমোৎকৃষ্ট মহত্তম কল্যাণের মূল, তখন তাহার সহিত গার্হস্থ্য এবং সামাজিক অনুষ্ঠান একতানে সম্মিলিত হইলে তাহা আরো কত না মঙ্গলের আকর হইয়া উঠে । মনু বলিয়াছেন যে, “অজ্ঞেভ্যো গ্রন্থিন: শ্রেষ্ঠা গ্রন্থিভ্যো ধারিণে বরাঃ। ধারিভ্যে জ্ঞানিন: শ্রেষ্ঠ জ্ঞানিভ্যে ব্যবসায়িনঃ।” অজ্ঞলোক অপেক্ষা গ্রন্থাধ্যায়ী ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ, গ্রন্থাধ্যায়ী ব্যক্তি অপেক্ষা ধারণাশীল ব্যক্তিরা শ্রেষ্ঠ, ধারণাশীল ব্যক্তিদিগের অপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদিগের অপেক্ষা ব্যবসায়ী ব্যক্তিরা (অর্থাৎ যাহারা জ্ঞান-অনুসারে কাৰ্য্য করেন এরূপ ব্যক্তির) শ্রেষ্ঠ । । জ্ঞানে শুধু পারমার্থিক সত্য উপলব্ধি করিয়া ক্ষান্ত থাকা ধৰ্ম্মামুমোদিত কাৰ্য্য নহে—জ্ঞানের সত্যকে সাংসারিক সমস্ত মঙ্গল কার্য্যে প্রয়োগ করা চাই তবেই ধৰ্ম্ম d, সত্য-হানি ধৰ্ম্মহানি এবং ব্রতভঙ্গ অনিবাৰ্য্য । ধৰ্ম্মের পথ অবলম্বন করিতে হইলে, সত্যনিষ্ঠ সাধককে সত্যের অনুরোধে এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা -—-

  • २ कन्न, ● छी नै

ধৰ্ম্মের অনুরোধে প্রচলিত লোকাচারের কোনো না কোনো অংশ পরিত্যাগ করি তেই হয় ; তাহা ভিন্ন গত্যন্তর নাই। কিন্তু ব্রাহ্মেরা কি পরিত্যাগ করিয়াছেন ? মূর্ব পদার্থের উপাসনা যাহা শ্রীতি স্মৃতি পুরাণাদিতে ভূয়োভূয় নিন্দিত হইয়াছে, পরিত্যাগ করিবার মধ্যে তাহাই তাহারা পরিত্যাগ করিয়াছেন—শাস্ত্র-বিগর্হিত জ্ঞানবিগর্হিত পথই পরিত্যাগ করিয়াছেন । র্তাহারা কি অবলম্বন করিয়াছেন ? ব্রহ্মোপাসনা যাহা সকল শাস্ত্রে ভূয়োভূয় প্রশংসিত হইয়াছে সেই সৰ্ব্ববাদি-সম্মত পথই অবলম্বন করিয়াছেন । ব্রাহ্মধৰ্ম্মের অনুষ্ঠান-পদ্ধতি ইহার একটি জাজ্বল্যমান প্রমাণ । ব্রাহ্মধৰ্ম্মোক্ত ব্রহ্মোপাসনা-পদ্ধতি সমস্ত শাস্ত্রের মথিত সারাংশ ; এই জন্য তাহার মধ্যে এমন একটিও কথা নাই যাহাতে সমস্ত ভারতবর্ষের সমস্ত ধৰ্ম্মসম্প্রদায় সমস্বরে যোগ দিতে না পারে । কি “সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম’ কি “ভয়াদস্যাগ্নিস্তপতি ভয়াভপতি সূৰ্য্যঃ” কি “নমস্তে সতে তে জগৎকারণায়’ কি গায়ত্রীধ্যান কি “অসতো মা সদগময়” কি “যএকোইবর্ণে বহুধা শক্তিযোগাৎ” সমস্তই আত্মার গভীরতম প্রদেশকে স্পর্শ করে এবং এইরূপ বিশুদ্ধ ব্রহ্মোপাসনা আত্মার শান্তির পক্ষে যেমন উপযোগী—পাপতাপের যেমন মহৌষধ—এমন আর কিছুই নহে । একদিকে যেমন ব্রহ্মোপাসনা আর এক দিকে তেমনি ব্রাহ্মধৰ্ম্মানুযায়ী সামা জিক অনুষ্ঠান ; একটি ব্রাহ্মধৰ্ম্মের অন্তরঙ্গ অব্যাহত রূপে স্ফ র্তি পাইতে পারে নচেৎ ৷ আর একটি বহিরঙ্গ ; দুইই জ্ঞানের অনুমোদিত হৃদয়ের অনুমোদিত এবং শাস্ত্রের অনুমোদিত—এই কারণে দুইই বর্তমান জন-সমাজের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উপযোগী ।