পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র ১৮১২ জন্য নরকবাসী হইবেন ! এক কথায় খৃষ্টব্যতিরেকে খৃষ্টীয় ধৰ্ম্ম থাকিতে পারে না । সেইরূপ মহম্মদ, কোরাণ প্রভূতিকে পশ্চাতে রাখিলে মহম্মদীয় ধৰ্ম্মও তিষ্ঠিতে পারে না । কিন্তু হিন্দুধৰ্ম্মের ইছাই গোঁরব, হিন্দুজাতির ইহাই সৌভাগ্য যে, অন্যান্য ধৰ্ম্মের ন্যায় হিন্দুধৰ্ম্মে বস্তু-বিশেষের অর্চনা শ্রেষ্ঠরূপে উক্ত না হইয়। ব্রহ্মোপাসনাই শ্রেষ্ঠরূপে উক্ত হইয়াছে। সনাতন হিন্দু ধৰ্ম্ম যখন উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করিতে থাকেন যে সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম, তখন কোন দেশীয়, কোন জাতীয় ধৰ্ম্মপরায়ণ ঘ্ৰেহ্মজিজ্ঞাস্ত্র ব্যক্তি কোন কালে শান্তি লাভ করিতে না পারেন ? অধিক আর কি কহিব—স্বয়ং বেদ, ব্রহ্ম ভিন্ন অন্য কোনো কিছুর উপাসনা নিষেধ । করিয়াছেন । “আত্মৈবেদং নিত্যদোপাসনং স্যাৎ নান্তং কিঞ্চিৎ সমুপাঙ্গীত ধীরঃ ।” জ্ঞানবান ব্যক্তি পরমাত্মারই উপাসনা করিবেক, আর কোন কিছুরই উপাসন করিবেক না । এই ব্রহ্মজ্ঞান প্রাচীন ভারতের মুনি ঋষিগণ অরণ্যবাসী থাকিয়া, বহু কৃচ্ছ, সাধনে শত শত বৎসরের ধ্যানের বলে লাভ করিয়াছিলেন । হিন্দদিগের মধ্যে যাহারা ব্রাহ্মদিগকে অহিন্দ, এবং ব্রাহ্মধৰ্ম্মকে কোন এক অহিন্দু বিজাতীয় ধৰ্ম্ম ভাবিয়া ব্রাহ্মসমাজকে সাহায্য করিতে পশ্চাৎপদ হয়েন, আমি সাহস পূর্বক বলিতে পারি যে, হিন্দু ধৰ্ম্মও ব্রাহ্মধৰ্ম্মের মধ্যে প্রভেদ কোথায়, কোন বিশেষ বিষয়ে উক্ত দুই ধৰ্ম্মের পার্থক্য, তাহ তাহারা চক্ষু খুলিয়া স্পষ্টরূপে দেখেন নাই—র্তাহারা কেবল অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হইয়া চলিয়াছেন । • তাহারা যদি একটুকু অনুধাবন পূর্বক বৰ্দ্ধমান সাম্বৎসরিক ব্রাহ্মসমাজ | i | | | i | | | | | | | | २९(t দেখেন ; তাহারা যদি পরবুদ্ধির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করিয়া একটুকুও আত্মবুদ্ধির পরিচালনা করেন, তবেই দেখিতে পাইবেন যে, প্রকৃত যাহা হিন্দু ধৰ্ম্ম, তাহাই সনাতন ধৰ্ম্ম—তাহাই ব্রাহ্মধৰ্ম্ম ; কেবল পরিচ্ছদ বিভিন্ন। পূর্বকালে যখন সনাতন ধৰ্ম্ম অরণ্যে মুনিঋষিগণের সহিত বাস করিতেন, তখন তিনি মুনিঋষিগণের বন্ধলের ন্যায় আরণ্যক পরিচ্ছদ পরিধান করিয়ছিলেন ; আবার যখন সেই সনাতন ধৰ্ম্ম অরণ্য হইতে সংসারে আনীত হইলেন, তখন তিনি আরণ্যক পরিচ্ছদ পরিত্যাগ করিয়া সাংসারিক পরিচ্ছদ পরিধান করিলেন । এই সাংসারিক বেশধারী সনাতন হিন্দু ধৰ্ম্মই ব্রাহ্মধৰ্ম্ম । ইহাও নুতন নহে ; মহর্ষি মনু প্রভৃতি এই আরণ্যক ধৰ্ম্মকে গৃহে আনয়ন করিয়াছিলেন, তাহার ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। এতানেকে মহাযজ্ঞান যজ্ঞশাস্ত্রবিদে জনাঃ । অনীহমানা: সততমিন্দ্রিয়েম্বেব জুহ্বতি ॥ বাচ্যেকে জুহ্বতি প্রাণং প্রাণে বাচঞ্চ সৰ্ব্বদা । বাচি প্রাণে চ পশ্যন্তে যজ্ঞনিবৃত্ত্বিমক্ষয়াং ॥ জ্ঞানেনৈ বাপরে বিপ্ৰ যজন্ত্যেতৈষ্মখৈ: সদ। জ্ঞানমূলাং ক্রিয়ামেষাং পশ্যন্তে জ্ঞানচক্ষুষা ॥ মনুসংহিতা । কতিপয় যজ্ঞীয় শাস্ত্রবেত্ত গৃহস্থ এই পঞ্চবিধ মহাযজ্ঞের বাহ্যাড়ম্বর না করিয়া স্বীয় বুদ্ধীন্দ্রিয়েতেই জ্ঞানাদির সংযমন করিয়া যজ্ঞ সম্পাদন করেন । ব্রহ্মবেত্তা কতিপয় গৃহস্থ বাক্যে ও প্রাণবায়ুতেই যজ্ঞের অক্ষয় ফল লাভ হয় জানিয়া সৰ্ব্বদাই অধ্যাপন, ঈশ্বরের মহিমা গানাদি বাক্যে প্রাণ ও ধ্যান ধারণাদি প্রাণে বাক্য হোম করেন । অপর কতিপয় ব্রহ্মবেত্তা ব্রাহ্মণ সতত ব্ৰহ্মজ্ঞান দ্বারা এই সমুদয় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন, তাহারা উপনিষদ রূপ জ্ঞান-চক্ষু সহকারে দেখিতে