পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র ৯৮১২ বৰ্দ্ধমান সাম্বৎসরিক ব্রাহ্মসমাজ ९९१ জন্য র্তাহাদিগের সকল কৰ্ম্মেই ধৰ্ম্মের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে । বিবাহ কৰ্ম্মের ও প্রত্যেক অংশেই ধৰ্ম্মভাব বিদ্যমান আছে- প্রত্যেক অংশেই প্রথমে প্রণব উচ্চারণের দ্বারা স্থষ্টি-স্থিতি-প্রলয়কর্তা পরব্ৰহ্মকে স্মরণ করিতে হয় ; এবং ইহাতেই কি বুঝা যাইতেছে না যে পূৰ্ব্বকালে নিরাকার চিৎস্বরূপ পরব্রহ্মথে সাক্ষী রাখিলেই বিবাহ সিদ্ধ হইত ? কিন্তু ক্রমে যখন হিন্দুগণ কৰ্ম্মকাণ্ডের প্রাবল্যে পরব্রহ্ম হইতে দূরে যাইতে লাগিল,তত অনুষ্ঠানে পৌত্তলিকতা আসিয়া যুটিতে লাগিল—ততই ঈশ্বরের স্থান, র্তাহারই গুণের কল্পিত মূৰ্ত্তি আসিয়া অধিকার করিতে লাগিল। পরে হিন্দুজাতি ঈশ্বর হইতে এত দূরে গমন করিল, যে, আর প্রস্তরাদি জড়বস্তুকেও ব্রহ্মজ্ঞানে পূজা করিতে কিছুমাত্র কুষ্ঠিত হইল না— যে জড়পূজা আমাদিগের শাস্ত্রে শতবার নিষিদ্ধ হইয়াছে। আশ্বলায়নীয় গৃহ্যসূত্রে আছে ‘‘একে আচার্য্যা কামপ্যান্থতিং নেচ্ছন্তি ।” কোন কোন আচার্য্যেরা বিবাহে কোন প্রকার আহুতি ইচ্ছা করেন না অর্থাৎ বিবাহকালে অগ্নিসাক্ষী রাখিতে ইচ্ছুক ছিলেন না, কেন ? কারণ বিবাহকালে হোমের ফল মঙ্গলার্থ স্বস্ত্যয়ন মাত্র, যথা উদ্ধাহতত্ত্বে— “মঙ্গলাৰ্থং স্বস্ত্যয়নং যজ্ঞস্তাসাং প্রজাপতে: । প্রযুজ্যতে বিবাহেষু ইত্যাদি মকুবচনং স্বস্ত্যয়নং কুশলেন কালাতিবাহহেতুকং । .. . যশ্চ প্রজাপতি দৈবতে বৈবাহিকো হোমস্তং সৰ্ব্বং মঙ্গলাৰ্থং । অভিমতার্থসিদ্ধিৰ্ম্মঙ্গলং তদৰ্থমবৈধব্যাথমিতি যাবৎ ।” ইহার ভাবার্থ এই যে, প্রজাপতি দৈবত বৈবাহিক হোম করিলে অবৈধব্য অর্থ সিদ্ধ হয়। এই মঙ্গলাৰ্থ ব্রাহ্মগণ । -ঈশ্বরের উপাসনা দ্বারা—র্তাহার আশীৰ্ব্বাদ প্রার্থনা দ্বারা সিদ্ধ করেন। যেমন হরিদ্র। অক্ষণ, উলুধ্বনিও শঙ্কবাদ্য প্রভৃতি বিবাহে মঙ্গলজনক, সেইরূপ হোমও যদি বিবাহ সম্পাদক না হইয়া মঙ্গলজনক মাত্র হইল তখন ইহা না করিলে বিবাহ অসিদ্ধ হইবার কোনই বিষয় নাই। পূর্বকালের আচার্য্যগণ যদি বিবাহে অগ্নিস্থাপন না করিয়া দোষের ভাগী না হইলেন তবে, ইদানীন্তন কালে ব্রহ্মোপাসক হিন্দুগণ র্তাহাদিগের বিবাহপদ্ধতি হইতে হোম উঠাইয়া দিয়া কি-এমন কুকাৰ্য্য করিয়াছেন ? পৌত্তলিক হিন্দুগণ যে অগ্নিশক্তিকে বিবাহের সাক্ষী রাখেন, অপৌত্তলিক হিন্দুগণ ঠিক সেই স্থানে সেই অগ্নিশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা পরব্রহ্মকে স্থাপন করেন— ইহ দোষের বিষয়, না, বঙ্গদেশে প্রথম অপৌত্তলিক অনুষ্ঠান হইয়াছে বলিয়। বঙ্গ দেশের এবং সমুদয় ভারতের গৌরবের বিষয় ? ব্রাহ্মধৰ্ম্মানুমোদিত অনুষ্ঠান পদ্ধতিতে কেবল বিবাহ কৰ্ম্মে নহে, জাতকৰ্ম্ম হইতে শ্রাদ্ধ অবধি সকল অনুষ্ঠানেই পৌত্তলিকত বর্জন করিয়া প্রকৃত হিন্দুভাব রক্ষিত হইয়াছে । এখন দেখিলাম যে অনুষ্ঠান বিষয়েও হিন্দুব্রাহ্মের মধ্যে বিদ্বেষ ভাব আসিতে পারে না । তবে এবিদ্বেষ আসিল কোথা হতে ? যদি পরস্পরের ধৰ্ম্মে বিভিন্নতা নাই, যদি পরস্পরের অনুষ্ঠানে বিভিন্নতা নাই, তবে এরূপ বিষম মনোমালিন্য আসিল কোথা হতে ? পূর্বেই বলিয়াছি যে তিনটী বিষয়ের বিশেষরূপ আলোচনা করিলে এবিষয়ের মীমাংসা হইতে পারে— (১) ব্রাহ্মধৰ্ম্ম কি ? (২) ব্রাহ্ম অনুষ্ঠান কি এবং (৩) প্রচারের কিরূপ উপায় গৃহীত হইয়াছে। যখন দেখিলাম যে ব্রাহ্মধৰ্ম্ম