পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র ১৮১২ বৰ্দ্ধমান সাম্বৎসরিক ব্রাহ্মসমাজ २२® তাহা হইলে কি ব্রাহ্মধৰ্ম্মের প্রচার সহজ হইবে ? ব্রাহ্মেরা যেন না ভাবেন যে বিপ্লব বাধাইয়। হিন্দুসমাজ উদ্ধার করিবেন। উমহারা যদি হিন্দুজাতির ও श्निধৰ্ম্মের ইতিহাস পর্য্যালোচনা করিয়া দেখেন, তাহা হইলেই দেখিতে পাইবেন যে হিন্দুধর্মের বিপ্লবে নাশের সম্ভাবনা নাই, প্রত্যুত হিন্দু ধৰ্ম্ম বৈপ্ন বিক ভাবের মধ্যগত সারভাগ গ্রহণ করিয়া বিপ্লবকারীগণকে দূর করিতে সমর্থ | হইয়াছেন। বৌদ্ধধৰ্ম্ম ইহার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ—বৌদ্ধধৰ্ম্মের সার অহিংসা পরমোধৰ্ম্মঃ, হিন্দু ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিলেন বটে, কিন্তু সাঙ্গ বৌদ্ধধৰ্ম্মকে ভারতবর্ষ হইতে বিতাড়িত করিয়া দিলেন। “হিন্দু ধৰ্ম্ম হাতীর মত । ধৰ্ম্মাবলম্বীরা আক্রমণ করে, কিন্তু একবার গাঝাড়া দিলেই কে কোথায় উড়িয়া যায়।’ ইতিপূর্বে আদি ব্রাহ্মসমাজের অনু- : ষ্ঠানের বিষয় বলিবার সময় সংস্কারের দৃষ্টান্ত দিয়াছি ; এইবারে বিপ্লব সম্বন্ধে তার ও দুএকটী কথা বলিয়া বক্তব্য শেষ করিব। পূর্বে কলিকাতা রাজধানীতে আদিব্রাহ্মসমাজই একমাত্র ব্রাহ্মসমাজ ছিল । পরে ব্রাহ্মদিগের মধ্যে মতভেদ উপস্থিত হওয়ায় অনেক অত্যুৎসাহী অত্যুদ্যমী ব্রাহ্ম কর্তব্যবোধে আদিসমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া বিভিন্ন সমাজ স্থাপনা করিয়াছিলেন । ব্রাহ্মসমাজ দেশেতে যতই স্থাপনা হয়, ততই মঙ্গল ; কিন্তু কেবল ব্ৰহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা হইলেই হইল না— ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচার হওয়া আবশ্যক। এই তদানীন্তন মতভেদের একটী কারণ জাতিভেদ । কোন ধৰ্ম্মশাস্ত্রেই বস্তুতঃ জাতিভেদ স্বীকার করে না—প্রকৃত হিন্দুধৰ্ম্মও ইহার গাত্র মশার ন্যায় অন্যান্য । তাহা করে না । “ঞ্চখেদে জাতিভেদের উল্লেখ নাই। মহাভারতে আছে ন বিশেষোইস্তি বর্ণনাং সৰ্ব্বং ব্রাক্ষমিদং জগৎ । ব্রহ্মণ পুৰ্ব্বস্বয়ংহি কৰ্ম্মণ। বর্ণতাং গতং ॥ এই ব্রহ্মময় জগতে বর্ণের বিশেষ নাই। ব্রহ্ম কর্তৃক পূৰ্ব্বস্বস্ট মনুষ্য সকল কৰ্ম্ম দ্বারা বর্ণ প্রাপ্ত হইয়াছেন।” মনু বলেন— শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতা । ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবস্তু বিদ্যাৎ বৈশ্যাত্তথৈবচ | শূদ্র ব্রাহ্মণ পদ প্রাপ্ত হয়েন এবং ব্রাহ্মণও শূদ্রপদ প্রাপ্ত হয়েন, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য সন্তানের বিষয়েও এই প্রকার জানিবে । মহাভরতীয় বনপৰ্ব্বাস্তগত আজগর পৰ্ব্বাধ্যায়ে আছে— সত্যং দানং ক্ষমাশীলমানৃশংসাং তপো ঘৃণা। দৃশ্যন্তে যত্র নাগেন্দ্র স ব্রাহ্মণ ইতি স্মৃতিঃ ॥ শূদ্রেতু যদ্ভবেল্লক্ষ্যং দ্বিজেতচ্চ ন বিদ্যতে । নবৈ শূদ্রো ভবেচ্ছদ্রে ব্রাহ্মণে নচ ব্রাহ্মণ । যত্ৰৈতং লক্ষ্যতে সৰ্প বৃত্তং স ব্রাহ্মণ: স্মৃত: । যত্রৈবং ন ভবেৎ সর্প তং শূদ্রমিতি নির্দিশেং ॥ সত্য, দান, ক্ষমা, শীল, আনৃশংস্য, তপস্যা, দয়। এই সকল গুণ র্যাহাতে দৃষ্ট হয়, তিনিই ব্রাহ্মণ বলিয়া উক্ত হয়েন । শূন্দ্ৰেতে যে সকল লক্ষণ, ব্রাহ্মণে সে সকল বিদ্যমান নাই । লোকে শূদ্র হইলেই শূদ্র হয় না, ব্রাহ্মণ হইলেও ব্রাহ্মণ হয় না । হে সৰ্প । যাহাতে উক্ত রূপ আচরণ লক্ষিত হয় তিনিই ব্রাহ্মণ বলিয়া স্মৃত হয়েন। হে সৰ্প । যাহাতে উক্তরূপ আচরণ বিদ্যমান না থাকে তিনি শূদ্র বলিয়া নির্দেশিতব্য । এখন দেখা গেল যে জাতিভেদ বলিয়৷ একটা বাস্তবিক কোন পদার্থ হিন্দুর স্বীকার করিতেন না। কিন্তু এখন কার্য্যতঃ জাতিভেদ হিন্দু জাতির মজ্জায় মজ্জায়