পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প চতুর্থ খণ্ড).pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯২ বদীর আরম্ভ হইতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পর্য্যন্ত এবং তৃতীয় যুগ তাহার পর হইতে আজ পর্যন্ত । প্রথম যুগের নেতা জয়দেব, বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাস প্রভৃতি। দ্বিতীয় যুগের চৈতন্যদেব, কৃষ্ণদাস কবিরাজ, বৃন্দাবনদাস, মুকুন্দরাম,কৃত্তিবাস, কাশীরাম, ভারতচন্দ্র প্রভৃতি । তৃতীয় যুগের মহাত্মা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর মহাশয়, অক্ষয়কুমার, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বঙ্কিমচন্দ্র, চন্দ্রনাথ, অক্ষয়চন্দ্র, কালীপ্রসন্ন, রজনীকান্ত রবীন্দ্রনাথ, নবীনচন্দ্র দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রভৃতি । কিন্তু আমার বোধ হয়, বাঙ্গলা সাহিত্যের ইতিহাসকে তিনযুগে বিভক্ত না করিয়া, প্রথম যুগ বাদ দিয়া দুই যুগে বিভাগ করাই যুক্তিযুক্ত। কারণ বিদ্যাপতি, চণ্ডিদাস প্রভূতির রচনাবলীতে বাঙ্গলা অপেক্ষা মৈথিলী ভাষার আধিক্যই প্রচুররূপে দেখিতে পাওয়া যায় । বঙ্গদেশে যখন তান্ত্রিক ধৰ্ম্মের শুস্কভাব সুরাপান । বিরাজমান এবং ব্যভিচার ও প্রভূতি জঘন্য ও জুগুপিলত ক্রিয়া ধন্মের নামে আধিপত্য করিতেছিল, তখন খৃষ্টের পঞ্চদশ শতাব্দীর অবসানে মহাত্মা চৈতন্য দেব অভূদিত হইয়া ভগবৎ-ভক্তির প্রচণ্ড উচ্ছাসে কেবল নবদ্বীপ বা বঙ্গদেশ নয়, কিন্তু উত্তরে হিমালয় হইতে দক্ষিণে সেতুবন্ধ রামেশ্বর এবং পশ্চিমে বৃন্দাবন হইতে পূৰ্ব্বে চট্টগ্রাম পৰ্য্যন্ত সমস্ত প্রদেশকে এই প্রবল । আন্দোলিত করিয়াছিলেন । ধৰ্ম্মান্দোলনের শক্তি যেমন বঙ্গের তৎকালিক সমাজ ও চিন্তারাজ্যকে আলোড়িত করিয়াছিল, সেইরূপ ইহা দ্বারা অন্যদিকে বঙ্গীয় সাহিত্যের ভিত্তি ভূমি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। গৌরাঙ্গ এবং তৎশিয্যের প্রবল মত্ততার সহিত সঙ্কীৰ্ত্তন, আলোচনা এবং বক্ততাদির সঙ্গে সঙ্গে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা

  • २ कछ, 8 ङीन

জাতীয় সাহিত্যের ভিতর দিয়াও এই ভক্তিপ্রবাহ প্রবাহিত করিয়াছিলেন । কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত ধ্রুবং বৃন্দাবন দাস প্রণীত চৈতন্যমঙ্গল প্রভূতি গ্রন্থকে বঙ্গীয় সাহিত্যের প্রথম পুস্তক বলিয়া ঘোষণা করিলেও বোধ হয় কিছুমাত্র অতিবাদ দোষে দূষিত হইতে হয় না । তারপর মুকুন্দরাম, ভারতচন্দ্র, কাশীরাম, কৃত্তিবাস প্রভৃতির গ্রন্থাবলী উত্তরোভর বাঙ্গলা-সাহিত্যের পরিপুষ্টি সাধন করিয়া আসিয়াছে। কিন্তু তাহা হইলেও দ্বিতীয় যুগের, বা আমার মতে প্রথম যুগের শেষ পর্য্যন্ত অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাবদীর শেষভাগ পৰ্য্যন্ত বঙ্গীয় সাহিত্যে গদ্য লেখার প্রবর্তন দেখিতে পাওয়৷ tয় না। এই সময়ের সাহিত্য সঙ্গীত ও কবিতার মধ্যেই নিবদ্ধ ছিল । তৎপরে উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এদেশে একট, একটা কেন,—দুইট প্রবল ধম্মান্দোলন উপস্থিত হওয়ায় বঙ্গীয় সাহিতে।র বিশেষ শ্ৰীবৃদ্ধি সাধিত হইয়াছে । যখন ইংরাজ বণিকদিগের বাহুবলে বা কৌশলে মোগল সাম্রাজ্য হীনশক্তি হইয়। পড়িতেছিল, এবং অবশেষে যখন মোগলদিগের শাসনদণ্ড ইংরাজদিগের করায়ত্ত হইল, তখন একজন আসাধারণ মানসিক বীর্য্য সম্পন্ন ব্রাহ্মণ সন্তান আবিভূত হইয়া “একমেবাদ্বিতীয়ং” পরমেশ্বরের নাম প্রচার করিতে লাগিলেন, এবং প্রায় এই সময়েই কয়েক জন সাধুচরিত্র পুরুষ ইংরাজ রাজত্ব বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে খৃষ্ট ধৰ্ম্মের স্বসংবাদ ঘোষণার নিমিত্ত এদেশে পদার্পণ করেন । ইহঁার একদিকে যেমন খৃষ্ট ধৰ্ম্মের মহিমা প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত নিজেদের লক্ষ লক্ষ টাকা অকাতরে ব্যয় করিয়াছেন,অশেষ ক্লেশ স্বীকার করিয়াছেন