পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাস্তিকতা । 8૧ নাস্তিকতা । ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস মনুষ্যের যার পর নাই স্বাভাবিক হইলেও, তাহার অতল স্পর্শ জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করিয়া তাহাতে । শ্রদ্ধাভক্তি অপণ করা সকলের ভাগ্যে ঘটিয়া উঠে না । কেহ বা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করেন না, কেহ বা র্তাহার অস্তিত্ব স্বীকার করিয়াও র্তাহার উপাসনার বা পূজাৰ্চনার বিশেষ আবশ্যকত দেখেন না। প্রার্থনা যে দুর্বল মনুষ্য হৃদয়ের স্বাভাবিক উচ্ছাস তাহা অনেকে সম্যকরূপে অবধারণ করিতে পারেন না । মনুষ্যের মন মোহতিমিরে এমনই আচ্ছন্ন, আশুর্তৃপ্তিকর বিষয়ের আকর্ষণ এমনই তীব্র, উন্মার্গগামী রিপুকুলের পরাক্রম এমনই দৃদমনীয়, যে মনুষ্য আপনার ভোগবিলাসকে অব্যাহত রাখিবার জন্য পাপচিন্তা পাপানুষ্ঠানে রত থাকিবার জন্য ঈশ্বরের ভাবকে মনে প্রতিভাত হইতে দেয় না, ক্রমাগত তাহ হইতে দূরে থাকিবার চেষ্টা করিতে থাকে । যে সকল তর্কতরঙ্গে স্বপ্রকাশ ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়, তাহারই অনু- | শীলনে আপনাকে কৃতাৰ্থ জ্ঞান করেন, এবং তাহার অস্তিত্ব বিলোপে আপনার জড়প্রায় ও পাপময় হৃদয়ের জড়তা ও চিরকলঙ্ক পোষণ করিতে থাকেন । যদি কেহ বলেন যে ঈশ্বর নাই, তবে সেরূপ অস্বীকারের কোন মূল্য নাই, কেন না তাহা হইতে কিছুই প্রমাণ হইল না । ঈশ্বর নাই মুখে বলা সহজ, কিন্তু এরূপ অস্বীকার যার পর নাই বিজ্ঞানবিরোধী। কেহ বলেন ঈশ্বর কেমন করিয়া থাকিতে পারেন, তিনি ভৌতিক ও প্রাণীজগতের সম্পূর্ণ অতীত। যখন র্তা அைெ -ாகனட் হার বিষয় কিছুই জানি না, তাহাকে চক্ষে দেখা যায় না, কর্ণে শ্রবণ করা যায় না, হস্তে স্পর্শ করা যায়.না, যখন র্তাহার বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ,তখন কেমন করিয়া বলিতে পারি যে ঈশ্বর আছেন । এ সকল চিন্তা বা কুতর্ক সহজেই মনে উদয় হইতে পারে বটে কিন্তু তাহারা প্রকৃত যুক্তির উপর স্থাপিত মহে । আমরা তর্ক-শাস্ত্র ও বিজ্ঞান শাস্ত্র আলোচনায় সুস্পষ্ট বুঝিতেছি, (১) চিন্তা বা মনে স্পষ্ট ধারণ কোন এক বস্তুর অস্তিত্বের নিয়ামক হইতে পারে না। যদি এরূপ বলা যায়, যাহা আমরা মনে স্পষ্ট ধারণা করিতে পারি, তাহার সভা আছে, যাহা ধারণা করিতে পারি না তাহার অস্তিত্ব নাই, তবে বিশেষ গোলযোগ উপস্থিত হয় । কোন এক বিষয়ের অস্তিত্বের ধারণা তোমার মনে সুস্পষ্ট না হইতে পারে কিন্তু আমার মনে কতকদূর পর্য্যন্ত সম্ভবে, অপর একজনের নিকট তাহ সুস্পষ্ট দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হইতে পারে। এরূপ স্থলে মনে স্থম্পষ্ট ধারণা কেমন করিয়া কোন এক বস্তুর অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিঃসংশয় পরিচয় প্রদান করিবে । সুতরাং ঈশ্বরের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানি না বা ধারণা করিতে পারি না বলিয়া তাহার অনস্তিত্ব কেমন করিয়া সিদ্ধ হইল । (২) পুনরপি আমারদের অজ্ঞতা হইতে কোন বস্তুর অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব মীমাংসিত হইতে পারে না । আমরা যাহা জানিতেছি তাহ আছে, যাহা জানিতে পারি না তাহার বিদ্যমানতা নাই, ইহা নিতান্ত বাতুলের প্রলাপ । যদি কেহ বলেন যে চন্দ্রমায় মনুষ্যের ন্যায় জীব বসতি করে, কেহ তাহ অস্বীকার করিয়া প্রমাণ স্বরূপ কখনই এরূপ বলিতে সাহসী ।