পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و در ۹۹ ভবানীপুর সপ্তত্রিংশ সাংসরিক ব্রাহ্মসমাজ । 66 আর সে চন্দ্র নাই—সে সূৰ্য্য আর সে সূৰ্য্য নাই—সে সমীরণ আর সে সমীরণ নাই ; সকল বস্তুই র্তাহার সমক্ষে আর এক বেশে—আর এক ভাবে—আর এক জ্যোতিতে উপস্থিত হয় । মোহাচ্ছন্ন পার্থিব প্রেমেই যখন এইরূপ হয় ; তখন জ্ঞানোজ্জ্বল স্বচ্ছ পবিত্র প্রেমে জগতের মূৰ্ত্তি আরো কত না পরিবর্তিত হইয়া যাইবার কথা ! বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রস্তর-পাষাণ স্কুল পিণ্ড মাত্র নহে—এই পৰ্য্যন্ত ; কিন্তু ঈশ্বর-প্রেমী সাধু ব্যক্তির রসাদ্র অন্তঃকরণের সন্নিধানে প্রস্তর পাযাণ কথা কহে—আপনার অন্তরের নিগুঢ় ভাব ব্যক্ত করে । তিনিও চরাচর প্রকৃতিকে পর ভাবেন না—চরাচর প্রকৃতিও তাহাকে পর ভাবে না ; ফল পুষ্প র্তাঙ্গকে যেমন প্রাণের সহিত গন্ধ-দান করে—এমন আর কাহাকেও নহে ; তাহার উৎপক্ষা নয়নে চন্দ্রমা যেমন প্রাণের সহিত জ্যোৎস্না বর্ষণ করে, এমন অণর কাহারে নয়নে নহে । যাহার অন্তঃকরণে মোহের আবরণ নাই—ৰ্তাহার সমক্ষে চরাচর বিশ্ব সংসারে কোনও আবরণই নাই। জগৎ, কেন তবে, সময়ে সময়ে ঈশ্বরপ্রেমীর প্রতি খড়গহস্ত হয়—ঈশ্বরপ্রেমীই বা কেন সময়ে সময়ে লোকালয় পরিত্যাগ করিয়া গিরিগুহা অরণ্যের . অtশ্রয় গ্রহণ করেন ? ইহার উত্তর এই যে, চরাচর প্রকৃতি ঈশ্বর-প্রেমী সাধু ব্যক্তির পর নহে, ইহা সত্য ; প্রকৃতিই যেন তাহার পর নহে —কিন্তু বিকৃতি ? বিকৃতি র্তাহার খুবই পর ! কেননা, প্রকৃতি এবং বিকৃতি উভয়ে পরম্পরের সপত্নী। স্বাস্থ্যই শরীরের প্রকৃতি, কিন্তু অস্বাস্থ্য শরীরের বিকৃতি । ধৰ্ম্মই মনুষ্যের প্রকৃতি কিন্তু অধৰ্ম্ম মনুষ্যের বিকৃতি। ব্যাঘ্র ভল্লুকের বটে দ্বেষ হিংসাই প্রকৃতি, কিন্তু মনুষ্যের তাহা প্রকৃতি নহে কিন্তু বিকৃতি। ব্যাস্ত্রের যাহা প্রকৃতি —মনুষ্যের তাহা বিকৃতি । দ্বেষ হিংসা ব্যাস্ত্রেরই ধৰ্ম্ম—মনুষ্যের তাহ ধৰ্ম্ম নহে কিন্তু অধৰ্ম্ম। ঈশ্বর-প্রেমী সাধুর সহিত প্রকৃতি মুক্তাবগুণ্ঠনে বাক্যালাপ করে— বিকৃতি ভ়াহার নিকটে লজ্জায় জড়ো সড়ো হয় ; ঈশ্বরপ্রেমার উপরে বিকৃতির তাই এত বিম-দৃষ্টি। ভগবদ্ধভক্ত ব্ৰহ্মজ্ঞ ব্যক্তিই , বিকৃতির মধ্য হইতে প্রকৃতিকে বাছিয়া লইতে পারেন—কেননা তিন নিজে প্রকৃতিস্থ । এইরূপ, বিকৃতির মধ্য হইতে প্রকৃতিকে বাছিয়া লওয়ার নামই বিবেক । শাস্ত্র সমূহের বাক।াবরণ ভেদ করিয়া তাহার ভিতরে তলাইয়া দেখিলেই স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, সংসারের মধ্যে বিকৃত ভাব যত কিছু আছে—তাহাই ভগবদভক্ত ব্রহ্মজ্ঞ ব্যক্তির নিকটে অন্ধকারময় অবিদ্যা—তাহাই কঠোর মরুভূমি ; কিন্তু বিকৃতির বিরোধী যত কিছু ভাব—প্রকৃত পক্ষেই যাহা প্রকৃতি—তাহা তাহার নিকটে ঈশ্বরের জ্যোতিৰ্ম্ময় রশ্মিজাল— প্রেমময়ের স্বমধুর আশ্বাসবাণী । মনুষ্যের অন্তরতম প্রকৃতিকে লক্ষ করিয়াই বলা হইয়াছে যে, “সহজেই ধায় নদী সিন্ধুপানে কুসুম করে গন্ধ দান, মন সহজে সদ। চাহে তোমারে তোমাতেই অনুরাগী” আর, ' বিকৃতিকে লক্ষ করিয়াই বলা হইয়াছে যে, “মোহ যদি না ফেলে অ ধারে ।” অতএব বিকৃতিকে সাবধান ! তার্কিক ব্যক্তি এখানে একটি তর্ক তুলিতে পারেন ; তিনি বলিতে পারেন যে, হিংস্র জন্তুর যেমন হিংসাই প্রকৃতি, হিংস্র মনুষ্যেরও তেমনি হিংসাই প্রকৃতি ; উহারই বেলায় হিংসা প্রকৃতি, আর, ইহারই বেলায় হিংসা বিকৃতি, এ কথা তুমি,