পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩ ৷ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা • २ कछ, ७ छांश তোমার গায়ের জোরে বলিতেছ। ইহার উত্তর এই যে, দ্বেষ, হিংসা যদি মনুষ্যের প্রকৃতি হইত, তবে তজ্জন্য মনুষাকে লজ্জিত অথবা কুণ্ঠিত হইতে হইত না । ব্যাঘ্ৰ তো আপনার দ্বেষ হিংসার জন্য এক দিনের জন্যও লজ্জিত কুষ্ঠিত অথবা অনুতপ্ত হয় না—মনুষ্য তবে কেন আপনার দ্বেষ হিংসাকে নানা প্রকার সভ্য পরিচছদে আবরণ করিবার জন্য যত্নবান হয় ? ব্যাস্ত্র যখন শিকারের রক্ত শোষণ করে, তখন সে আরক্ত নয়নে বিকট দশনে গর্জন করিতে থাকে—কিন্তু মহাপ্রতাপশালী রাজা যখন প্রজার রক্ত শোষণ করেন তখন কেন তিনি তাহার নিজ-মূৰ্ত্তি ধারণ করিতে সঙ্কুচিত হ’ন ? তার এক কথা এই যে, আমরা যখন ব্যাস্ত্রকে হরিণ আক্রমণ করিতে দেখি, তখন ন্দৰ্য্য দেখিতে পাই ; কিন্তু যখন আমরা কোন অত্যাচারী রাজাকে প্রজাপীড়ন করিতে দেখি, তখন তাহা আমাদের নিতান্তই চক্ষুশূল হয়—অত্যাচার যদি । মনুষ্যের প্রকৃতিসিদ্ধ হইত তবে কখনই । এরূপ হইত না । তা ছাড়া—ব্যাত্র হরিণ বধ করিয়া পরম পরিতোষ ভিন্ন এক মুহুর্ভের জন্যও গ্লানি অনুভব করে না ; কিন্তু অত্যাচারী রাজা প্রজাপীড়ন দ্বারা প্রভূত অর্থ উপার্জন করিলে ও অন্তঃকরণের গভীর প্রদেশে কিছুতেই শান্তি লাভ করেন না—“এই কার্য্যের জন্যই কি আমি এই দুর্লভ মনুষ্য-দেহ ধারণ করিয়া পৃথিস্ত্রীতে জন্ম-গ্রহণ করিয়াছি” এইরূপ একটা র্ভোবনার বিষজ্বালা যখন তখন তাহার মনোমধ্যে জাগরূক হইয়া উঠে। দ্বেষ হিংস। অত্যাচার যদি মনুয্যের প্রকৃতিসিদ্ধ হইত তবে কখনই এরূপ হইত না । তাহ ত হতে আমরা একপ্রকার প্রকৃতির সোঁ- ; হয় ? যাইবার পথ অবরুদ্ধ হইয়া যায় না। পূর্বকথিত ঐ গীতটির পরেই আসিতেছে “প্রাসাদ কুটীরে এক ভানু বিরাজে, নাহি করে মনুষ্যের বিকৃতি যেমন পদে পদে, তেমনি তাহার বিপরীত আর একটা দিক্‌ শুদ্ধ কেবল মনুষ্যের মধ্যেই দেখিতে পাওয়া যায়—কি ? না বিকৃতির মধ্য হইতে প্রকৃতিতে উথান করিবার শক্তি । বিকৃতি মনুষ্যকে চিরকালের মতো কাবু করিয়া রাখিতে পারে না—বিকৃতি মনুষ্য সমাজে চিরস্থায়ী হইতে পারে না। উন্মলিত হইবার মধ্যে মনুষ্য-সমাজে কেবল দ্বেষ হিংসা প্রভৃতি বিকৃতি সকলই উত্তরোত্তর ক্রমে উন্মলিত হইয়া যায় ; পরি- ; স্ফুট হইবার মধ্যে মনুষ্য-সমাজে কেবল জ্ঞান ধৰ্ম্মই উত্তরোত্তর ক্রমে পরিস্ফুট হইয়া উঠিতে থাকে। মনুষ্য যখন বিকৃ তির মধ্যে অবস্থিতি করে, তখন ও সে ঈশ্বরের বজ্রধ্বনির আহবান শুনিতে পায়— শুনিয়া তার সে স্থির থাকিতে পারে না । এ তো স্পষ্টই দেখা যাইতেছে যে, “সহজে ধায় নদী সিন্ধুপানে কুহুম করে গন্ধদান, মন সহজে সদা চাহে তোমারে তোমাতেই অনুরাগী— মোহ যদি না ফেলে আঁধারে P কিন্তু মোহ যদি ফেলে অর্ণাধারে ? তখন কি তখনও অমৃত নিকেতনে ফিরিয়া কোন বিচার ; তেমনি নাথ তোমার কৃপা হে বিশ্বময় প্রচার, অবারিত তোমারি দুয়ার ” সূৰ্য্য-কিরণের ন্যায় ঈশ্বরের মহতী শক্তি এবং করুণা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে পরিল্যাপ্ত ! অমৃত নিকেতনের দ্বার সর্বত্র অবারিত ! মেঘাচ্ছন্ন হইতে কেবল আমাদের চক্ষুই মেঘাচ্ছন্ন হয় –সূৰ্য্য কখনই মেঘাচ্ছন্ন হয় না। মোহের ঘন কুজবটিক ভেদ করিয়া পরমাত্মার করুণা-রশ্মি অবতীর্ণ হয়— ·