পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৩ ৷ তেমনি মনুষ্যের প্রবৃত্তি এবং অন্ধ সংস্কারের উপরে জ্ঞান-চক্ষুর প্রতিবিম্ব পড়াতে মনে হয় যেন, জ্ঞান-চক্ষু সেই সকল প্রবৃত্তিরই চক্ষু—প্রবৃত্তি-সকল যেন অন্ধ নহে কিন্তু চক্ষুষ্মান ; এই জন্য কখনো কখনো লোকে ক্রোধান্ধ হইয়া কোনো | কাৰ্য্য করিবার সময়েও মনে করে যে, তেছি । কিন্তু প্রবৃত্তি এবং অন্ধ-সংস্কার যখন নিজ-মূৰ্ত্তি ধারণ করে তখন তাহাদের । তত্ত্ববোধিনী পত্রিক २२ कब्र, ० छॉर्भ সমূহ যখন সংযম-শক্তি দ্বারা নিয়মিত হইয়। সুসংযত-ভাব ধারণ করে, তখন তা হাদিগকে দেখিতে দেখায় যেন চক্ষুষ্মান; | | —সারথী যখন পথ চিনিয়া অশ্বকে ঠিক্‌ ৷ পথে চালায় তখন দেখিতে দেখায় যেন অশ্ব নিজে পথ চিনিয়া চলিতেছে । এ স্থলে কেহ জিজ্ঞাসা করিতে পারেন যে, আমি খুব বিবেচনা-পূর্বক কাৰ্য্য করি । | | মুখপানে তাকাইলেই বুঝিতে পার। যায় ! যে, তাহারা অন্ধ এবং মূঢ়—তাহাদের মধ্যে । জ্ঞানের কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না ; l i i : বরং জ্ঞানের উণ্ট লক্ষণই প্রকাশ পায়— । মূঢ়তাই প্রকাশ পায়—অন্ধতাই প্রকাশ পায় ; শাস্ত্র মতে ইহারই নাম অবিদ্যা । এইরূপ আমরা আপনার আপনার । অভ্যন্তরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেই সংস্কার শক্তি এবং সংযম শক্তির ভেদাভেদ সুস্পষ্ট রূপে দেখিতে পাই ; দেখিতে পাই যে— · উভয়ই জ্ঞানালোকে আলোকিত ; কিন্তু সাক্ষাৎ জ্ঞান কেবল সংযম শক্তিতেই অধিঠিত আছে ; সংস্কার-শক্তিতে জ্ঞানের ভাণ ইতিপূর্বে আমরা যাহা দিয়াছি তাহ। দুষ্টে আমাদের কথার মৰ্ম্ম পাঠকের নিকট বর্ষণ করিতেছে—চন্দ্র জানিয়া | মাত্র-আভাস মাত্র-ছায়া মাত্র প্রতিভাত । হয় । ইহার একটা মোট-মুটি দৃষ্টান্ত । সুব্যক্ত হইতে পারিবে ;—আমরা বলিয়াছি যে, দীপও উজ্জ্বল—দীপালোকিত গৃহ ও উজ্জ্বল—দুইই উজ্জ্বল, এইখানে দুয়ের সাদৃশ্ব ; কিন্তু দীপ স্বয়ং উজ্জ্বল—গৃহ স্বয়ং উজ্জ্বল নহে—দীপ স্থানান্তরিত হইলেই গৃহ অন্ধকার, এইখানে উভয়ের মধ্যে প্রভেদের পরাকাষ্ঠী । এ যেমন, তেমনি—মনুষ্যের প্রবৃত্তি ও সংস্কার স্বয়ং অন্ধ—সংযম শক্তি স্বয়ং চক্ষুষ্মান; কিন্তু মনুষ্যের প্রবৃত্তি ধৰ্ম্ম-পরায়ণ মনুষ্যের অন্ধ প্রবৃত্তি-সকলের পরিচালক যে, জ্ঞান, তাহ অবশ্য মনুষ্যের নিজেরই জ্ঞান; সুতরাং মনুম্যের অন্ধ সংস্কারের উপরে জ্ঞানের আভাস যাহা নিপতিত হয়, তাহা তাহার নিজেরই জ্ঞান হইতে নিপতিত হয় ;—এটা বেস্ বুঝিলাম ;– কিন্তু পশুদিগের অন্ধ সংস্কারের উপরে জ্ঞানের আভাস যাহা নিপতিত হয় তাহা কোথা হইতে নিপতিত হয় ? ইহার উত্তর এই যে, সমস্ত প্রকৃতিতে জ্ঞানের ছায়া যেখান হইতে নিপতিত হয়, এখানেও সেইখান হইতেই নিপতিত হয় ; সমস্ত জগতের মূলে সর্বজ্ঞান অটল-রূপে অধিষ্ঠিত বলিয়াই দেখিতে দেখায় যেন— সূৰ্য্য জানিয়া শুনিয়া পৃথিবীতে দীপালোক শুনিয়া নিস্তব্ধ রজনীতে মাধুৰ্য্য রস সিঞ্চন করিতেছে—মৌমাছিরা জানিয়া শুনিয়া ভবিষ্যতের উপজীবিকা বর্তমান কালেই ভাণ্ডারস্থ করিতেছে । মৌমাছির অন্ধ-সংস্কারের মধ্যে চেতনের ছায়। যাহা কিছু দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা যে তাহার নিজের জ্ঞান হইতে আসিতেছে না—এ বিষয়ে কাহারো সংশয় হইতে পারে না ; কেন না, তাহা যদি হইত, তবে মৌমাছি অধুনাতন বিখ্যাত কারিকরদিগের মধ্যে প্রধান আসন পাইবার যোগ্য হইত। ইতর জীবদিগের সকল বিদ্যাই অশিক্ষিত বিদ্যা—তাহার “না পড়িয়া পণ্ডিত ;” ।