পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و «نماد ۲-fچ চিরাগত পৈতৃক সংস্কারকে ছাড়িয়া স্বাধীনতা কিছুই করিতে পারে না। আবার, জ্ঞানকে ছাড়িয়াও প্রাণ উন্নতি-সোপানে আরোহণ করিতে পারে না ; জাগ্ৰত জ্ঞান এবং স্বাধীন চেষ্টা ব্যতিরেকে—পৈতৃক সম্পতিরও উন্নতি হইতে পারে না—পৈতৃক ংস্কারেরও শ্ৰীবৃদ্ধি হইতে পারে না ; অতএব, জ্ঞানও চাই, প্রাণও চাই,-দুয়ের কেহই কাছারো ছোটো নহে কেহই কাহারো বড় নছে—দুইই সমান । পূৰ্ব্বে বলিয়াছি যে, জ্ঞান এবং প্রাণের মধ্যে বিরোধই আমাদের দেশের সমস্ত বিরোধের মুল, আর, ব্রাহ্মধৰ্ম্ম সেই বিরোধ ভঞ্জন করিবার জন্য ধরাতলে অবতীর্ণ হইয়াছেন ; ভাষার দৃষ্ট্রান্তে এই কথাটি আরো স্পষ্টরূপে বুঝিতে পারা যাইবে । পূৰ্ব্বে বলিয়াছি যে, ইতর-ভাষাই ভাষার প্রাণ। ব্যাকরণাদির জ্ঞান সেই প্রাণের সঙ্গে বিরোধ করিয়া একপ্রকার কৃত্রিম সাধুভাষ গড়িয়া তুলিতে পারে, কিন্তু সে সাধু-ভাষা আর কিছু নয়—নিজীব নিস্তে জ নীরস ভট্টাচার্ষ্য ভাষা; তাহার ভিতরে প্রাণ নাই। পক্ষাস্তরে এইরূপ দেখা যায় যে, ইতর ভাষা ব্যাকরণাদিজ্ঞানের সহিত বিরোধ করিয়া সাহিত্যসমাজে আপনার একাধিপত্য বিস্তার করিতে পারে ;–কিন্তু সেরূপ ইতর-ভাষা অতীব নীচ-শ্রেণীর গ্রাম্য ভাষা । জ্ঞান এবং প্রাণের বিরোধ হইতে দুই প্রতিদ্বন্দী ভাষা প্রসূত হয়—প্রাণ-শূন্য ভট্টাচাৰ্য্য ভাষা এবং জ্ঞান-শূন্য গ্রাম্য-ভাষা ; দুয়ের কোনোটিই বিশুদ্ধ সাধুভাষা নহে। ইতর-ভাষার প্রাণ স্ফৰ্ত্তি—ব্যাকরণাদির জ্ঞানমূলক নিয়মে নিয়মিত হইয়। যে এক সৰ্ব্বাঙ্গ-সুন্দর ভাষা প্রসব করে সেই জ্ঞান-প্রাণের সংযোগাত্মক ভাষাই বিশুদ্ধ সাধু ভাষা। এই দৃষ্টান্তটি উল্লেখ করিবার তাৎপৰ্য্য শুদ্ধ কেবল এইটি ষষ্টিতম সান্ধৎসরিক ব্রাহ্মসমাজ ২০৩ ' দেখানে যে, জ্ঞান এবং প্রাণ দুয়ের যোগ । বাতীত কোনো কৰ্ত্তবা কার্যাই সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর হইতে পারে না । অৰ্দ্ধশতাব্দী পূৰ্ব্বে আমাদের দেশে তিনরূপ ভাষা প্রচলিত ছিল; (১) অবিশুদ্ধ গ্রাম্য ইতর ভাষা ; ইহাই প্রাণের ভাষা ছিল । (২) নীরস ভট্টাচার্য ভাষা ; ইহাই জ্ঞানের ভাষা ছিল । (৩) এবং জ্ঞানশূন্য প্রাণশূনা আদালতি ভাষা ; ইহাই কার্যের ভাষা ছিল । ভাষার এ যেমন দেখা গেল—ধৰ্ম্মেরও অবিকল সেইরূপ দশা ঘটিয়াছিল ; একদিকে অন্ধ ভক্তি, আর এক দিকে শুক জ্ঞান, আর-এক দিকে ক্রিয়াকাণ্ডের বাহ্যাড়ম্বর, এইরূপ তিন সহোদর— জ্ঞান প্রাণ এবং কৰ্ম্ম-পরম্পরের সহুিত বিরোধ করিয়া তিন-দিকে ছট্‌কিয়া পড়িয়াছিল । ব্রাহ্ম ধৰ্ম্মের আবির্ভাবের পর হইতে ভাষার তিন অবয়ব একত্র ঘনীভূত হইয়। ক্রমে ক্রমে বঙ্গভাষার শ্ৰী ফিরিয়া দাড়াইয়াছে—আমাদের দেশে বিশুদ্ধ সাধু-ভাষা জন্ম গ্রহণ করিয়াছে ;—ব্রাহ্মধৰ্ম্মের ব্যাখ্যানাদির ভাষাতেই ব্রাহ্মধর্মের অস্তরের লক্ষণ স্পষ্টাক্ষরে দেদীপ্যমান—কি ? না জ্ঞান প্রেম এবং কৰ্ম্মের ত্রিবেণী-সঙ্গম । এতক্ষণ যাহা বলিলাম, তাহার মধ্যে সবর্বপ্রধান মন্তব্য কথা দুইটি ;–প্রথম মন্তব্য কথ। এই যে জ্ঞান এবং প্রাণ দুয়ের সমবেত সাহায্য বাতিরেকে কৰ্ত্তব্যের অনুষ্ঠান সৰ্ব্বাঙ্গ স্বন্দর হইতে পারে না । জ্ঞানকে ছাড়িয়া প্রাণ অর্থাৎ প্রীতি-ভক্তি—অন্ধ ; প্রীতি ভক্তিকে ছাড়িয়া জ্ঞান—পঙ্গু । জ্ঞানের নিয়ম এবং প্রেমের আদর্শ এই দুয়ের যুগল আধিপত্যেই কর্তব্য-সাধনে বল পৌছে । জ্ঞান এবং প্রাণ এ দুই পদার্থ মুলে একই বস্তু ; প্রাণের চক্ষু ফুটিলেই তাছা জ্ঞান হইয় দাড়ায়—জ্ঞানে বল পৌছিলেই তাহ | প্রাণ হইয়া দাড়ায়। নবোম্মেষিত জ্ঞানের