পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (দ্বাদশ কল্প দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রকৃত ধৰ্ম্ম পাউক আর নাই পাউক,ধৰ্ম্মের জন্য টান আছে। ঈশ্বর-আশ্রয়ে নিরাপদ হউক আর নাই হউক, কিন্তু নিরাপদ হইবার ভাবটী প্রাণগত, জীবনগত । এই ভাবট মানব-হৃদয়ে এত প্রবল যে, বোধ হয় আত্মার প্রত্যেক বৃত্তিরই জীবন-শোণিত এই আকাঙ্ক্ষা । আবার এই আকাঙ্ক্ষা জিজ্ঞাসাময়। মানব প্রাণ যেন দুঃখ বিষাদ, আকাঙ্ক্ষা,অভিমান,দন্ত,কাম, ক্রোধ,লোভ, মোহের প্রশস্ত অস্ত্রাগার। তাহাতে আবার যখন আকাঙক্ষার বীরুদে বাসনার অাগুন লাগে তখন অস্ত্রাগারের অস্ত্রের তেজে প্রত্যেক মনুষ্য হা হতোস্মি করিতে করিতে অস্থির হইয় উঠে । ইহাতে যোগীরও মন টলে, প্রেমিকেরও ধৈর্য্যচু্যতি হয়, বিশ্বাসীর অন্তরে নিরাশ আসে, আর যথার্থ ব্যাকুলিত আত্মাও নিশ্চেষ্ট হইয় পড়ে না, তবে রক্ষা এই যে, এই অস্ত্রাগারট দ্বিতল, প্রথম তল হইতে দ্বিতীয় তলট ক্ষুদ্র ও অল্পায়তন । তুলনায় সাগরের নিকট জলবিন্দু যতক্ষুদ্র তাহার অপেক্ষাও প্রথমতল হইতে দ্বিতীয়তল ক্ষুদ্র তম । কিন্তু দুঃখের বিষয়, অতি অল্প লোকই ঐ হরহৎ অস্ত্রাগারের সংবাদ রাখে। তাহার জন্যই সাধু বলিয়াছেন,— “নিজ নবতন মহলমে সদা সুখ রাশ । আপৃঘর চিনহে শান্ত কাটে। যম কি ফাস।” আপনার নবতন মহলে গমন কর, তথায় নিত্য শান্তি বিরাজিত ; আপনার ঘর আপনিই চেন, যমের বন্ধন ছেদন কর । মানবাত্মা বাস্তবিকই অস্ত্রাগার। দ্বিতীয় অস্ত্রাগারের চোটে জগৎ অস্থির । জনসমাজে সৰ্ব্বদাই তাহার ক্রীড়া দেখিতে পাওয়া যায়। কাম ক্রোধ লোভ মোহাদির গোলা গুলিতে মানুষ তটস্থ । t টনা । লাগে, তখন আর দ্বিতীয় তলট টিকিতেই তবে প্রথম তলে যখন আগুন পারে মা । মানবের হৃদয়ে যখন ব্রহ্মজিজ্ঞাসার উদয় হয়, তখন প্রাণের বৃত্তিরই জড়তা দূর হইয়া যায়। বারুদ যতদিন আর্দ্র বা সিক্ত থাকে, ততদিন তাহাতে অগ্নিস্পর্শ হইতে পারে না । আর যখনই বারুদ শুষ্ক হইয় উঠে, অমনি অগ্নিস্পর্শমাত্র এক প্রকাণ্ড কাণ্ড উপস্থিত করিয়া তুলে। মানবের প্রাণ যত দিন ভাব-রসে রসিক থাকে, ভাবের অাবিলে অচেতন থাকে, ততদিন তাহার জ্ঞান, ভক্তি, প্রেম ও বিশ্বাস কথার কথা মাত্র, সিক্ত বারুদে অগ্নিসংযোগের ন্যায় হাস্যাম্পদ । আর যখনই ব্রহ্মজিজ্ঞাসার প্রবল তেজে ভাবের আবিলত উড়িয়া যায়, তখনই আত্মার বৃত্তিনিচয়ে ব্রহ্ম-কৃপায় জ্বলন্ত হুতাশন লাগিয়া প্রথমতঃ দ্বিতীয় তলটীকে হৃদয় হইতে উড়াইয়া দেয়, তার পর বিশ্বাস, প্রীতি, জ্ঞান, পবিত্রতার ব্রস্বাস্ত্রে জগৎকে স্তম্ভিত করিয়া তুলে । ইহার নামই মনুষ্যত্ব, আশ্চর্য্যের অাশচর্য্য। আর নিজের প্রাণে এইরূপ আগুন না লাগিলে ধৰ্ম্মপ্রচার হইতে পারে না । বুদ্ধ, চৈতন্য, খ্ৰীষ্ট ও মহম্মদের হৃদয়ের প্রথম স্তরে আগুন লাগিয়াছিল, তাই তাহারা ধৰ্ম্মপ্রচার করিতে পারিয়াছিলেন, নিজে শান্তি পাইয়াছিলেন, অপরকে স্বর্থী করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন । হৃদয়ে যখন শোক ও দুঃখের শেল বিদ্ধ হইয়া থাকে, প্রাণ যখন মোহের প্র খর বাণে অধীর, মন যখন কাম ক্রোধাদি রিপু ও হিংসা নীচতার মৰ্ম্মভেদী অস্ত্রে আহত, তখন মনে হয় এই যাতনা রাখি কোথায় ? এই অস্ত্র বাছিয়া ফেলি কো