পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (পঞ্চম কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তত্ত্ববোধিনী পত্রিক సె( আজও বৃষ্টি। বৃষ্টির সময় আকাশ আর গঙ্গা একাকার হইয়া যাইতেছে। আমরা রেদ্রের মধ্যে থাকিয়া সম্মুখে দুরেতে বৃষ্টির পতন দর্শন করতে করিতে অচিরাৎ রৌদ্রকে পশ্চাতে রাখিয়া বৃষ্টি-রাশির মধ্যে প্রবেশ করিলাম। ক্রমে সমুদ্রের লক্ষণ প্রকাশ পাইতেছে । কলম্বস্ যেমন সমুদ্র মধ্যে ভটের নানা চিহ্ন দেখিয়া কোন এক ভূতন দেশ প্রতীক্ষা করিতেছিলেন ; আমরাও সেইৰূপ আগ্রহের সহিত সমুদ্রকে প্রতীক্ষা করিতেছি । এক্ষণে যেন গঙ্গার সমুদ্ৰ—ক্রমে তাহার সীমা-চিহ্ন বিলীন হইতেছে । এখন যে দিকে নেত্রপাত করা যায়, সেই দিকে তরঙ্গময় জল-রাশি ভিন্ন আর কিছুই দেখা যায় না ; কেবল আমাদের অগ্রপশ্চাৎ এক এক খান জাহাজ নয়নের সম্মুখে পড়িতেছে। ক্রমে জলের বর্ণ পরিবপ্ত হইতেছে । ঘোলা বর্ণ, সবুজ বর্ণ, গাঢ় সবুজ,এই তিন প্রকার বর্ণ একে একে দেখা যাইতেছে। কতক দূরে নীল রেখা। অাশ্চর্য ( ! আশ্চির্য্য ! গঙ্গার ঘোলাজল একেবারে পরিত্যাগ করিলাম। এক্ষণে গাঢ় সবুজ, সে লীলবর্ণ আর দেখা যায় না । গঙ্গর সুশীল ভাব আর নাই; সমুদ্রের তরঈ উঠিতেছে, আমাদের বাষ্পীয় নৌকাকে অস্থির করতেছে। আঃ! সমুদ্রের কি উদার মুৰ্ত্তি ! আমি দিশেষ করিয়া দেখিলাম, সমুদ্র দেখিয়া অনন্তভাব কতদূর উদয় হয়। চক্ষু তরঙ্গের উপর তরঙ্গ হইতে বহুদূরে প্রসারিত হয় এবং ততদূরে গিয়া নিবৃত্ত হয় , যেখানে সমুদ্র আকাশ আর মেঘাবলিকে স্পর্শ করিয়াছে ; যেখানে চক্ষু নিবৃত্ত হয়, মন তাহা হইতেও অগ্রগামী হইয়। আরো ধাবমান হয় ; এই ৰূপে অনন্ত ভাবের উদ্বোধন হইতে থাকে। সন্ধ্যার সময় সমুদ্র আরো গম্ভীর ও উদায় ভাব ধারণ করল । একে গাঢ় তিমির ; তাহাতে নীল সমুদ্র—তাহার উপরে তাহার শুভ্র ফেল কি আশ্চৰ্য্য ৰূপে শোভা পাইতেছে। মেঘদূত্বে এক স্থানে গঙ্গার ক্ষেনকে তাহার হাস্ক ৰূপে বর্ণিত আছে, কিন্তু এই সমৱে সুনীল সমুদ্রের ফেনকেই তাহার অপুর্ব হাস্কের মত দেখা যাইস্তুেছে। অামর অগাধ সমুদ্রের গর্তে আসিয়াছি। এক্ষণে আকাশ জার সমুদ্র r বোধ হইতেছে যেন সমুদ্র ভিন্ন আর কিছুই স্থষ্টি হয় নাই । ১৪ আশ্বিন, বৃহস্পতিবার | অদ্য প্রত্যুষে উঠিয়া সমুদ্রকে দেখিলাম, একেবারে গাঢ় নীলবর্ণ। এমত নীলবর্ণ কল্পনাও করা যায় নাই। গাঢ় নীল ! তাহার নিকটে নীল আকাশ ফীক হইয়া যায়। বাষ্পীয়-নেকুণ সমুদ্রের গৰ্ত্ত বিদারণ পূৰ্ব্বক যেমন দ্রুত বেগে চলিতেছে, তেমনি তরঙ্গ উঠিয়া তাছার নীল জলকে সবুজ করিয়। দিতেছে, এবং তাহার সহিত শুভ্র ফেন মিশ্রিত হইয়। শোভা পাইতেছে। স্থৰ্য্য কিরণে সমুদ্রের লহরী সকল চক মক করিতেছে । সমুদ্রের উপরে এক একবার পক্ষযুক্ত মৎস্য-দল দলবদ্ধ হইয়া অলপ অলপ উড়িয়া যাইতেছে ; হঠাৎ দেখিলে বোধ হয় যেন পক্ষীর সমুদ্রের উপরে আহার অন্বেষণে উড়িয়া বেড়াইতেছে । যদিও সমুদ্রের এই শোভা দেখিয়া মনের উল্লাস হইতেছে, তথাপি নেীকার দোলাতে প্রাতঃকাল অবধিই আমর গ৷ বমি বমি করিক্তেছে । সমস্ত দিনের মধ্যে ৩, ৪, ৫ বার বমি করিলাম । অণর কিছুই ভাল লাগে না । এক্ষণে কোথায় ব1 শোভা ! কোথায় বা সমুদ্র দর্শন ! কোথায় ব। আমোদ ! এখন সকলই শুষ্ক —সকলই নীরস I সমস্ত দিনই অসুখে গেল, রাত্রিতে নৌকার কুঠরির মধ্যে বদ্ধ হইয়। রছিলাম । ১৫, ১৬, ১৭ অশ্বিন ; শুক্র, শনি, রবিবার । কিছুই ভাল লাগে না । সমুদ্রের সঙ্গে বড়ই বিরোধ উপস্থিত হইয়াছে । সমুদ্রের নাম শুনিলে, সমুদ্রের উপরে দৃষ্টি করিলে, সমুদ্রের ভাব স্মরণ করিলেও বমি আইসে। আমার সকল অপেক্ষ দুরবস্থা ; কিন্তু ক' লীকমল'ভায়। যেমন তেমনি । শষ্য হইতে উঠিবার সময় শরীরকে আর কোন ক্রমে উঠাইতে পার। যায় না ; , সমুদ্র জলে স্নান করিয়া আরো অবসন্ন হইয়। পড়িতে হয় ; আহারের সঙ্গে কোন সম্পর্কই নাই। ৰত্ব কষ্ট ! বড় কষ্ট ! আমাকে কেহ জা