পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আদর্শের অনুকূল তাহা শ্রেয়ষ্কর বলিয়া গ্রহণীয়; যাহা এই আদর্শের প্রতিকূল তাহা অনিষ্টকর বলিয়া পরিত্যাজ্য।

 নূতন আদর্শের উপর যদি জীবন গঠন করিতে হয় তাহা হইলে গতানুগতিক পন্থা পরিত্যাগ করিতে হইবে। পাশ্চাত্য জাতিরা গতানুগতিক পন্থা বর্জন করিয়া সর্বদা নূতনের সন্ধানে ছুটিতে পারে বলিয়া তাহারা এত উন্নতি করিতে পারিয়াছে। কিন্তু আমরা যেন “অজানার” ভয়ে সর্বদা ভীত; বাহির অপেক্ষা আমরা যেন ঘরকেই ভালোবাসি, তাই আমাদের spirit of adventure এত কম। কিন্তু এই spirit of adventure— যাহার এত অভাব আমাদের মধ্যে—সকল জাতির উন্নতির এইটিই একটা কারণ। আমি বাংলার তরুণে সমাজকে তাই বলিতে চাই— বাহিরের জন্য, নূতনের জন্য, “অজানার” জন্য পাগল হইতে শিখিতে হইবে। ঘরের কোণে অথবা দেশের কোণে লুকাইয়া থাকিলে চলিবে না। সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরিয়া নিজের চোখে দেখিতে হইবে এবং দেশদেশান্তর হইতে জ্ঞানাহরণ করিয়া আনিতে হইবে।

 আমাদের অসীম শক্তি আছে— নাই আমাদের আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। নিজের উপর, নিজের জাতির উপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা ফিরাইয়া আনিতে হইবে। দেশবাসীকে অন্তরের সঙ্গে ভালোবাসিতে হইবে। মানুষ অন্তরের সহিত যাহা আকাঙ্ক্ষা করে তাহা সে একদিন পাইবেই পাইবে।

 স্বাধীনতা লাভের জন্য আমরা যদি পাগল হইতে পারি তবেই আমাদের অন্তর্নিহিত অসীম শক্তির ক্ষরণ হইবে; আমরা নিজেরাই অবাক হইব এত শক্তি এত দিন কোথায় লুকাইয়া ছিল। এই নবজাগ্রত শক্তির বলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিতে পারিব।

 জাতিকে যদি মুক্ত করিতে হয় তাহা হইলে সর্বাগ্রে স্বাধীনতার আস্বাদ নিজের অন্তরে পাইতে হইবে। “আমি মুক্ত, স্বাধীন মানুষ”—এই কথা ধ্যান করিতে করিতে মানুষ সত্যসত্যই নির্ভীক হইয়া উঠে। নির্ভীক হইতে পারিলে মানুষ কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হয় না; কোনো বাধা-বিঘ্ন, তাহার পথরোধ করিতে পারে না।

 যশোহর খুলনার ভ্রাতৃবন্দ—এসো আমরা একসঙ্গে বলি—“আমরা মানুষ হব; নির্ভীক, মুক্ত, খাঁটি মানুষে হব। নূতন স্বাধীন ভারত আমরা ত্যাগ, সাধনা ও প্রচেষ্টার বলে গড়ে তুলব। আমাদের ভারতমাতা আবার রাজরাজেশ্বরী হবেন; তাঁর গৌরবে আমরা আবার গৌরবান্বিত হব। কোনো

৯৭