শতগুণে বাড়িয়াছে। এক-কথা বোধ হয় অন্যান্য সকলেই সমর্থন করিবেন।
দেশবন্ধু যে সহজ ও অনাবিল রসিকতার অফুরন্ত ভাণ্ডার ছিলেন এ-কথা আমি জেলখানায় ভাল রকম বুঝিতে পারি। কত রকমের রসিকতার দ্বারা তিনি দিনের পর দিন সকলকে আমোদিত করিয়া রাখিতেন! প্রেসিডেন্সী জেলে আমাদের পাহারার জন্য সঙ্গীনধারী গুর্খা সৈনিক নিযুক্ত হইয়াছিল। একদিন সকালে উঠিয়া তিনি দেখিলেন গুর্খা সৈনিকের পরিবর্ত্তে একজন রুলধারী হিন্দুস্থানী সিপাহী উপস্থিত। অমনি তিনি বলিয়া উঠিলেন, “কি হে সুভাষচন্দ্র, শেষটা আসি ছেড়ে বাঁশী; আমরা কি এতই নিরীহ?” তাঁহাকে চেষ্টা করিয়া অথবা ভাবিয়া চিন্তিয়া রসিকতা করিতে হইত না। পর্ব্বত-নির্ঝরিণীর ন্যায় তাঁহার রসিকতা আপনার প্রেরণায় আপনি ছুটিত, আমি তাঁহার এই গুণের বিশেষ উল্লেখ করিলাম তার কারণ এই যে, জাতিহিসাবে আধুনিক বাঙ্গালীর মধ্যে রসের বোধ কিছু কম। আমি অন্যান্য বিদেশীয় জাতিদের সহিত তুলনা করিয়া এ-কথা বলিতেছি; হইতে পারে ভারতের অন্যান্য জাতির অপেক্ষা এখনও বাঙ্গালীর রসবোধ বেশী।
রসবোধ থাকিলে মানুষ প্রতিকূল ঘটনার আঘাতে সহজে কাতর হয় না, সর্ব্বাবস্থায়ই মজা লুটিতে পারে। জেলখানার একঘেয়ে জীবনের আবর্ত্তে পড়িলে এ-কথার সত্যতা হাড়ে হাড়ে বুঝা যায়। দেশবন্ধুর রসিকতা এত সহজ ও অনাবিল ছিল যে, বয়সের তারতম্য অথবা আমাদের সম্বন্ধের দরুণ আমরা কোনরূপ সঙ্কোচ বোধ করিতাম না।
ইংরাজী ও বাংলা সাহিত্যে তাঁহার গভীর পাণ্ডিত্য ছিল এবং ইংরাজী কবিদের মধ্যে তিনি ব্রাউনিং-এর অত্যন্ত অনুরক্ত ছিলেন।