পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৪
তরুণের স্বপ্ন

ও মুখে ভাষা দেন—তবে সে সব কথা দেশবাসীকে জানাবার আকাঙ্ক্ষা ও স্পর্দ্ধা আছে।

 জেলে আছি—তাতে দুঃখ নাই। মায়ের জন্যে দুঃখভোগ করা সে ত গৌরবের কথা! Suffering-এর মধ্যে আনন্দ আছে, এ কথা বিশ্বাস করুন। তা না হলে লোক পাগল হয়ে যেত, তা না হলে কষ্টের মধ্যে লোক হৃদয়ের আনন্দে ভরপুর হয়ে হাসে কি করে? যে বস্তুটা বাহির থেকে Suffering ব’লে বোধ হয়—তার ভিতর থেকে দেখলে আনন্দ বলেই বোধ হয়। অবশ্য বৎসরের মধ্যে ৩৬৫ দিন এবং দিনের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা এ ভাব আমার থাকে না, কারণ—এখনও শৃঙ্খলের দাগ গায়ের উপর রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই যে, এই অনুভূতি অল্পাধিক ভাবে যার নাই, সে না পারে Suffering-এর দ্বারা জীবনকে পরিপুষ্ট করতে, না পারে suffering-এর মধ্যে প্রকৃতিস্থ থাকতে।

 আমার দুঃখ শুধু এই যে, চৌদ্দমাস কাল অনেকটা হেলায় কাটিয়েছি। হয়তো বাঙ্গলার জেলে থাকলে এই সময়ের মধ্যে সাধনার পথে অনেকটা এগুতে পারতুম। কিন্তু তা হবার নয়! এখন আমার প্রার্থনা শুধু এই, “তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।” যখনই খালাসের কল্পনা করি তখন আনন্দ যত হয়, তার চেয়ে বেশী হয় ভয়। ভয় হয় পাছে প্রস্তুত হতে না হতে কর্ত্তব্যের আহ্বান এসে পৌঁছায়। তখন মনে হয়, প্রস্তুত না হওয়া পর্য্যন্ত যেন খালাসের কথা না উঠে। আজ আমি অন্তরে-বাহিরে প্রস্তুত নই, তাই কর্ত্তব্যের আহ্বান এসে পৌঁছায় নাই। যেদিন প্রস্তুত হব সেদিন এক মুহূর্ত্তের জন্যও আমাকে কেহ আট্‌কে রাখতে পারবে না।

 এসব ভাবের কথা; এর মধ্যে objective truth আছে কি না