পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
তিতাস একটি নদীর নাম

নিঃশেষ হইয়া যাইবে। তখন কোমরে দড়ি বাঁধিয়া কাদার উপর দিয়া টানিয়া নিতে হইবে, আর নৌকায় কাঁধ ঠেকাইয়া ঠেলিতে হইবে।

 ওদিকের ঘাটে আরেকখানা ডিঙ্গি খুলিতেছে। সেখান হইতে ডাক আসে, ‘অ, নিত্যানন্দ দাদা, অ গৌরাঙ্গ দাদা!’

 কান পর্যন্ত ঢাকিয়া মাথায় জড়ানো নেকড়ার রাশ। দুই বুড়া শুনিতে পায় না। কাছে আসিয়া ডাকিতে দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল! কিন্তু সে নৌকাতেও মালসা নাই দেখিয়া গৌরাঙ্গ বিমর্ষ মুখে দড়ির গিঁট খোলাতে মন দিল। যত খোলে, আবার জট লাগে। মাচান পাতা শেষ করিয়া দড়ির গেরোয় দাঁড় ঢুকাইতে গিয়া নিত্যানন্দ মুখ তুলিয়া চাহিল, ‘কি রে ছিনিবাস, বেপারে যাইবি?’

 ‘হ দাদা। গাঙে মাছ পড়ছে। অখন কি না গিয়া পারি? তোমরা যাইবা না?’

 ‘যামু। আইজ না, কাইল। আইজ রাজার ঝিরে লইয়া গোকনঘাট যামু কিনা।’

 দড়ি-খোলা ও বৈঠা-বাঁধা শেষ করিয়া গৌরাঙ্গ কাঁপিতে কাঁপিতে বাড়ির দিকে পা বাড়াইল। তার মুখে রাগে ও বিরক্তিতে কথা ফুটিতেছিল না। সে শুধু বিড় বিড় করিয়া ‘রাজার ঝি,’ ‘রাজার ঝি’ করিতে লাগিল। উঠানে পা দিয়া গৌরাঙ্গের যত রাগ জল হইয়া গেল।

 রাজার ঝি পা মেলিয়া বসিয়া বিলাপ করিতেছে।

 বুড়ার চোখে জল আসিয়া পড়িল। সত্যি এই দুঃখী