পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১০৫

মেয়েটাকে দুই ভাই বড় স্নেহ করে। কিন্তু তার বুকভরা কান্না জুড়াইতে তাদের বুড়া হৃদয়ের স্নেহই যথেষ্ট নয়। ছেলেটা ঘরের এক কোণে মলাটের বাক্সে তার রূপকথার রাজ্য সাজাইতেছে। কয়েকটি ছবির টুকরা, দেশলাইর খালি-বাক্স, জাল বুনিবার দুই একটা ভাঙা উপকরণ, কিছু সূতা, ছেঁড়া একখানা ভক্তিতত্ত্বসার, একটুকরা পেন্সিল। মলাটের বাক্সে সযত্নে সাজানো হইলে মাকে হাত ধরিয়া উঠাইল। রোগা, একটুকরা ছেলেটার ইচ্ছার নিকট পরাজয় মানিয়াই যেন যুবতী মা কান্না থামাইয়া উঠিয়া পড়িল। এবার যাত্রা করিবার পালা।

 ধরা গলায় গৌরাঙ্গ বলিল, ‘আর কিছু বাকি নাই ত?’

 আর একটি কাজ বাকি আছে। তারা তুলসীতলায় প্রণাম করিতে গেল।


 নৌকা কতক্ষণ স্রোতের টানে বেশ চলিল। গ্রাম্য নদী। খাল বলিলেও চলে। দুই পারে যেন ছবি আঁকা। রোদ উঠিয়াছে। দুই পারে গ্রামের পর মাঠ, তার পর গ্রাম। গ্রাম ছাড়াইয়া নৌকা চলিয়াছে।

 অনন্ত মার কোল ঘেঁসিয়া বসিয়াছিল। নৌকাতে এই প্রথম উঠিয়াছে। আজ তার আনন্দের সীমা নাই। দুই চোখে এক রাজ্যের বিস্ময়। নদীর দুইটি তীরই এত কাছে! দুইদিকেই যখন গ্রাম থাকে তখন দুইটি গ্রামই কত কাছে। গ্রাম ছাড়াইয়া যখন মাঠে পড়ে,—জমির আলের উপর