পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১০৯

রেখা বালির বুকে আঁচড় কাটিয়াছে। ছোট ছোট বেলেমাছ সে বালিতে বুক লাগাইয়া চুপ করিয়া আছে, যেন হাত বাড়াইলেই ধরা যাইবে। একটুও নড়িবে না। আর সেই শামুক চলার দাগ, কম জল হইতে ক্রমে বেশি জলের দিকে চলিয়া গিয়াছে। জলের নীচে বালিমাটি ক্রমে ঢালু হইয়া চলিয়াছে—এখানটা স্পষ্ট দেখা যায়, ওখানটা একটু একটু করিয়া অস্পষ্ট হইয়াছে, তারপর ওখানটাতে কিছুই আর দেখা যায় না। জল ওখানে বেশি কিনা। শামুকগুলি ওখানটাতেই গিয়াছে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের পায়ে চলার দাগগুলিও অদৃশ্য হইয়াছে। ওখানটাতে কি রহস্য! নামিলে পায়ে মাটি ঠেকিবে না। আরও একটু দূরে বুঝি ঐ দাঁড় দিয়াও মাটি ছোঁয়া যাইবে না। সেখানটাতে আরও কত রহস্য! কত কি যে আছে সেখানে, হাজার চেষ্টা করিলেও অনন্ত কোনোদিন দেখিতে পাইবে না। তার চোখ আবার নিকটে ফিরিয়া আসিল। বেলে বাচ্চাগুলি এখনো শুইয়া আছে। হাত দিয়া জল নাড়িতেই মাছ ক’টা চড় চড় করিয়া চলিয়া যাইতে লাগিল। জলের উপর ভাসিয়া উঠিল না। বালিমাটিতে বুক লাগাইয়াই ক্রমে অস্পষ্ট হইয়া মিলাইয়া গেল, কোথায় জলের গভীরতার দিকে, যেখানে অনন্ত অনেক কিছুর মতই তাহাদিগকেও দেখিতে পাইবে না সেখানে।

 শামুকের দাগগুলি দৃষ্টিসীমার যেখান থেকে উধাও হইয়াছে, সেখানটাতে অনন্ত আরো অনেক্ষণ চাহিয়া থাকিত, মা তাকে টানিয়া কোলের কাছে বসাইল, চুলের ভিতর আঙ্গুল চালাইবার জন্য।