মাতাপুত্রের দিকে স্নেহদৃষ্টিতে চাহিয়া নিত্যানন্দ বলে, ‘তিতাসের জল এত ফরসা! মাছ ত এই জলে মারা পড়ে না, মারা পড়ে ঘোলা জলে। এই সংকটকালে কি খাইয়া বাঁচ্বি মা, আমি তাই ভাবি।’
মাছের জো সামনে। তারজন্যে জেলেরা এখন থেকেই শক্ত জাল বোনে। তার জন্য চাই শণসূতা। সে-গাঁয় গিয়া বসিতে পারিলে এখন থেকেই সে মিহি ও মোটা দুই রকমের সূতা কাটিবে। বেচিবে। তাতে মা ছেলেতে দুর্দিন কাটাইবে।
‘খাই না-খাই দিন আমার যাইব, রাইত্ আমার পোহাইব। কিন্তু তোম্রা ত জন্মের লাগি পর হইয়া গেলা।’
তারাও যদি এ-নদীর পারে ঘর বাঁধিত! কিন্তু জন্ম-ভিটার এমনি তাদের মায়া, বুড়া হইয়াছে, সব ছাড়িবে, তবু জন্ম-ভিটা ছাড়িবে না।
তিতাসের জলের মতই অনন্তর মার চোখের ফরসা জল হু হু করিয়া ছুটিয়া আসিতে চায়।
হালে দড়ি পরাইয়া নিত্যানন্দ যৌবন-বেগে দুই-তিন টান দিয়া বলিল, ‘গৌরাঙ্গসুন্দর!’
‘কি দাদা।’
‘আমার গাতিটা খুইল্যা দে। শীত পলাইছে।’
গৌরাঙ্গসুন্দর নৌকার গলুই ধুইতেছিল। দাদার আদেশ পাইয়া তার পিঠের বড় গেরো খুলিয়া পরতে পরতে পেঁচানো কাপড়ের নিবিড় বন্ধন হইতে দাদাকে মুক্ত করিল। গাতি তাদের শীতের পোষাক।