পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১১১

 এবার গৌরাঙ্গসুন্দর গঙ্গামার নাম স্মরণ করিয়া লগি ঠেলিয়া নৌকা ভাসাইল।

 অনন্তকে মা আরো কাছে টানিয়া নিল। সে নীরবে মার বাহুর বেড়ায় বাঁধা পড়িল, কিন্তু তখন তার মন না ছিল মার দিকে না ছিল দাদাদের দিকে। নৌকাখানার অস্তিত্ব পর্যন্ত সে ভুলিয়া গেল। তার চোখের সামনে জাগিয়া রহিল শুধু একটা নদী। সে নদী তার সকল সত্তাকে, সারা অনুভূতিকে, লূতাতন্তুর মত টানিয়া লইয়া চলিয়াছে। ভূত-ভবিষ্যত বিস্মৃত হইয়া সে এই সদাজাগ্রত মুখর বর্তমানের স্রোতে ভাসিয়া চলিয়াছে। তার প্রকৃত যাত্রা শুরু যেন হইয়াছে এইখান থেকে।


 দুপুর গড়াইয়া গেল। একটু পরেই বিকাল হইবে। অনন্তর মা সে গাঁ কোনো দিন চোখে দেখে নাই। শুধু জানে গাঁ খানা তিতাস নদীর তীরে। নদী সোজা উত্তর দিকে আসিয়া এ গায়ের গাঁ ঘেঁসিয়া পশ্চিম দিকে মোড় ঘুরিয়াছে। এক একটা গ্রামের ছায়ায় নৌকা আসিলে চমকাইয়া উঠিয়াছে, বিহ্বলের মত চাহিয়াছে, এই বুঝি সেই গাঁ। গাঁ খানা তার মনকে টানিয়াছে শুধু আজ নয়, অনন্ত যখন পেটে, তখন থেকে। অত বিস্মৃতির মাঝেও, বিপদের অত ঝড়তুফানের মাঝেও, গাঁ খানার নাম সে মনে রাখিয়াছে। আর কিছু তার মনে নাই। এই গাঁ হইতেই সে প্রবাসে গিয়াছিল। তার নামও মনে নাই, দেখিতে যেন কি রকম