পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১১৩

নাই; হাতে নোয়া কপালে সিঁদুর পরণে শাড়ি মানায় না। বাপ জোর করিয়া বিধবার বেশ পরাইয়াছে। আপত্তি করিলে বলিয়াছে, ডাকাতে যখন ধরিয়াছিল, নিশ্চয়ই কাটিয়া ফেলিয়াছে, তা না হইলে, মোহানার স্রোতের পাকে যখন পড়িয়াছিল, নৌকা কি আর ছিল, নিশ্চয়ই ডুবিয়া গিয়াছিল। আমার সকল বন্ধন ছিন্ন করিয়া চিরদিন আমাকে মেয়ের মত কাছে রাখিবে বুড়ার মতলব ছিল এই। প্রতিবেশীদের কাছে তখন পরিচয় দিয়াছে, এর স্বামীকে ডাকাতে মারিয়া ফেলিয়াছে; একেও মারিয়া ফেলিত, জলে ঝাঁপ দিয়া বাঁচিয়াছে। সেই থেকে বিধবার বেশ। কিন্তু সে তো বাহিরের। মনে মনে জানি সে আছে। সে ঐ গাঁয়েই আছে। কিন্তু না জানি তার নাম, না জানি তার বন্ধুর নাম।


 রোদ কড়া হইয়া উঠিয়াছে। নৌকাখানা তাতিয়া উঠিয়াছে। দুই বুড়ার শক্ত চামড়াও তাতিয়া উঠিয়াছে। অনন্তর মার স্নেহ উথলিয়া উঠিল। বার বার ইচ্ছা করিল তার শাদা কাপড়ের আঁচল দিয়া তাদের গায়ে ছায়া দেয়। কিন্তু সে অসম্ভব। একটা বালিকাবয়সী নারীর আঁচলে গা ঢাকা দেওয়ার বয়স তাদের নাই। সে-আঁচলে সে অনন্তর রোদে-তাতা ছোট শরীরখানা সূর্যের আড়াল করিল। কড়া রোদে, মায়ের মিষ্টি ছায়ার আড়ালে থাকিয়া অনন্ত কোনো এক সময়ে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। অনেক কিছু দেখিতে