পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১১৫

কুটির। এদেরই সঙ্গে কাটাইতে হইবে তার সুখ দুঃখের দিনগুলি। পারে উঠিয়া দৈনন্দিন কাজেকর্মে এদেরই সঙ্গে সে মিশিয়া যাইবে। তার খুব আনন্দ হইল, এরা যেন কত আপন। তিতাসের ছোট ঢেউ তীরে আসিয়া মাথা রাখিতেছে। আমার বুকের ঢেউ বুঝি ঐ নারীদের বুকে মাথা রাখিবার জন্য উদ্দাম হইয়া উঠিয়াছে।

 একটা পাগলকে দুই বুড়াবুড়ি টানিতে টানিতে ঘাটের দিকে লইয়া আসিতেছে। পাগল একটা যুবক। হয়ত সুন্দরই ছিল। এখন কদাকার হইয়া গিয়াছে। হাড় দেখা দিয়াছে, চামড়ায় খড়ি উঠিতেছে। বিড়বিড় করিয়া কত কি যে বকিতেছে। বুড়াবুড়ির হাত ছাড়াইবার জন্য হুমড়ি খাইয়া পড়িতেছে। বুড়া তার শীর্ণ হাতখানা তুলিয়া গায়ের সব জোর একত্র করিয়া ঠাস-ঠাস পাগলটাকে মারিতেছে। মার খাইয়া পাগলটা ককাইয়া উঠিতেছে। কিছুতেই জলে নামিবে না। তারাও জলে না নামাইয়া ছাড়িবেনা। স্নান তাকে করাইবেই। পাগলের গায়ে এবার যেন হাতীর জোর আসিল। এক ঝট্‌কায় বুড়ার হাত ছাড়াইয়া দৌড় দিতে যাইতেছিল সে। হাতের কাছে একখণ্ড কঞ্চি পাইয়া বুড়ি সপাং সপাং করিয়া পাগলটাকে মারিল। পাগল এবার গলা ছাড়িয়া কাঁদিতে লাগিল। বুড়ার চোখেও জল আসিয়া পড়িয়াছে। বুক জোড়া নিশ্বাস ফেলিয়া সে আক্ষেপ করিতে লাগিল, ‘হায়রে বিধাতা, হায়রে উপরোল্লা, এ কি করলে, কোন্ পাপে তুই আমারে এ শাস্তি দিলে। সাধ