তার ইতিহাস। কিন্তু সে কি আজকের কথা? কেউ মনেও করে না কিসে তার উৎপত্তি হইল। শুধু জানে সে একটি নদী। অনেক দূর-পাল্লার পথ বাহিয়া ইহার দুই মুখ মেঘনায় মিশিয়াছে। পল্লীরমণীর কাঁকনের দুই মুখের মধ্যে যেমন একটু ফাঁক থাকে, তিতাসের দুই মুখের মধ্যে রহিয়াছে তেমনি একটুখানি ফাঁক—কিন্তু কাঁকনের মতই তার বলয়াকৃতি।
অনেক নদী আছে বর্ষার অকুণ্ঠ প্লাবনে ডুবিয়া তারা নিশ্চিহ্ন হইয়া যায়। পারের কোন হদিস থাকে না, সবদিক একাকার। কেউ তখন বলিতে পারে না এখানে একটা নদী ছিল। সুদিনে আবার তাদের উপর বাঁশের সাঁকোর বাঁধ পড়ে। ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়িরা পর্যন্ত একখানা বাঁশে হাত রাখিয়া আর একখানা বাঁশে পা টিপিয়া টিপিয়া পার হইয়া যায়। ছেলে-কোলে নারীরাও যাইতে পারে। নৌকাগুলি অচল হয়। মাঝিরা কোমরে দড়ি বাঁধিয়া সেগুলিকে টানিয়া নেয়। এপারে ওপারে ক্ষেত। চাষীরা দিনের রোদে তাতিয়া কাজ করে। এপারের চাষী ওপারের জনকে ডাকিয়া ঘরের খবর জিজ্ঞাসা করে। ওপারের চাষী ঘাম মুছিয়া জবাব দেয়। গরুগুলি নামিয়া স্নান করিতে চেষ্টা করে। অবগাহন স্নান। কিন্তু গা ডোবে না। কাক-স্নান করা মাত্র সম্ভব হয় কোন রকমে। নারীরা কোমরজলে গা ডুবাইবার চেষ্টায় উবু হয়। দুই হাতে ঢেউ তুলিয়া নীচু-করা ঘাড়ে-পিঠে জল দিয়া স্নানের কাজ শেষ করে। শিশুদের ডুবিবার ভয় নাই বলিয়া মায়েরা