কিন্তু এবাড়ি আগেত এমন ছিল না। এর চারিদিকে মালঞ্চঘেরা ছিল। একদিকে ফুলবাগান, একদিকে বেগুন ক্ষেত, একদিকে বাঁশঝাড়, আমগাছ, আর পূবদিকে পুষ্করিণী। ফুলগুলিতে মৌমাছি গুন্গুন করিত। আমগাছে বসন্তের কোকিল ডাকিত। বাঁশঝাড়ে রাতদিন পাখ্পাখালিতে কলরব করিত। মালিনীর যখন বয়ঃসন্ধি সে তখন কলাপাতা লইয়া এই পথ দিয়া পাঠশালায় গিয়াছে। ভরা যৌবনেও মালিনীকে দেখিয়াছে। এখনো মনে পড়ে, দাওয়ায় বসিয়া মালী ও মালিনীতে ধুচনি বুনিতেছে, শেষে একদিন মালী মরিয়া গেল। তখনও মালিনীর ভরা যৌবন। সেই অবারণ যৌবনভার আগলাইয়া বহুদিন সে কাটাইয়া দিল। বাড়ির চারিদিকে মালঞ্চের বেড়া তখনো ছিল। তার মনের বাঁধন যতই আলগা হইতেছিল, মালঞ্চের বাঁধনকে ততই সে শক্ত করিয়া তুলিতেছিল। সেখানে ঢুকিয়া কিন্তু ফুলে হাত দিবার সাধ্য কারো ছিল না। মুখে প্রণয়ের মধুভাণ্ড ধারণ করিয়াও সে-বাড়িতে পা ফেলিতে অনেকের বুক শঙ্কায় সঙ্কুচিত হইত। আজ মুখে কালকূটের বোঝা লইয়া জাতকেউটেরা অসঙ্কোচে ঘুরিয়া বেড়ায়।
এরকম হইল কেন? কেন মালিনীর যৌবনের ছেলেপুলেগুলি, বার্ধক্যের নাতি-নাতনিগুলি এবাড়ির আঙ্গিনায় খেলাইতে নামিল না। তার থেকে কেন আরো দশটা জোয়ান পুরুষ-নারী ঘর্মক্লান্ত দেহে এই বাড়ির ফলফুলের ভার সাজাইতে আজ এখানে কর্মব্যস্ত নয়। সংখ্যায় বাড়িয়া, এই বাড়িতে