পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৪৫

কয়েক পা হাঁটিয়া নিজের হিস্যায় পা দিল। দিয়া, চমকাইয়া উঠিল। উঠানের কোণে ধানসিদ্ধ করার যে দু-মুখো উনান আছে সেখানে একটা ছায়ামূর্তি নত হইয়া কি যেন হাতড়াইতেছে। কাঁধের লাঠি হইতে আস্ত গজার মাছটা খুলিয়া লাঠিখানা বাগাইয়া একেবারে তার মুখোমুখি হইয়া দাঁড়াইল। তখন তাহাকে চিনিতে পারিয়াছে।

 ‘মাত্‌বর তুমি। অত রাইতের পর ইখানে।’

 ‘বাহারুল্লা ভাই, আমি পথ বিস্মরণ হইয়া গেছি। গেছলাম সমাজের বৈঠকে। এমন ভুল ত হয় না আমার।’

 বাহারুল্লা তাহাকে হাত ধরিয়া বারান্দায় উঠাইল।

 তার পরিবার ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল, ডাকিতেই উঠিয়া লণ্ঠন জ্বালিয়া দরজা খুলিল। সে ঘরে ঢুকিয়া গামছা-বাঁধা পুঁটলিটা মাটিতে রাখিল। একটা পিঁড়ি হাতে বারান্দায় আসিতে আসিতে পরিবারকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, ‘একটু তামুক নি খাওয়াইতে পারে।’

 পরিবার বৌ নয়, গিন্নি। তার তিন ছেলের তিন বৌ স্বামী লইয়া তিনি ঘরে তখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। গিন্নি ক্ষিপ্রহাতে হুকা ধরাইয়া কপাটের কোণে ঠেকাইয়া, বাহারুল্লার ভাতের জন্য পাকঘরে গেল। মাঝঘরের বিছানাটা বারান্দা হইতে দেখা যায়। এই বাড়ির গৃহিণী একটু আগে এখান হইতেই উঠিয়া গিয়াছে। অনেকগুলি ছেলেপুলে বুকে পিঠে লইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। রামপ্রসাদ তামাক টানিতে টানিতে একবার সেদিকে আর একবার বাহারুল্লার