‘হ, আট পালা। চাইর পালা যাত্রা আর চাইর পালা কবি।’
‘আ—ট পালা? এই টেকা দিয়া তারা মলোপাড়ায় যদি একটা ইস্কুল দিত।’
‘আর ইস্কুল। মালোরা পুলকে বাঁচে না, তারা দিব ইস্কুল!’
‘দেখ মাত্বর, নিজেত আঞ্জি ক খ শিখলাম না। কিন্তু ‘কালা আখর’ যে কি চিজ অখন কিছুকিছু টের পাই। মজিদের কিনারে এজমালির যে মক্তব জমাইছি, বেহানে তার কাছ দিয়া যাইতে যাইতে খাড়া হইয়া থাকি, তারা পড়া করে, আমার কানে মধু বরিষণ করে।’
‘বাহারুল্লা ভাই, উচিত কথা কইলে মালোরা লাঠি মার্তে চায়। এই দুঃখেইত গাঁও ছাইড়া দেশান্তরী হইলাম।’
জোরে একটা টান দিয়া হুকাটা রাখিতে রাখিতে বাহারুল্লা বলিল, ‘মালোগুষ্টি সুখে আছে। মরছি আম্রা চাষীরা। ঘরে ধান থাক্লে কি, কমরে একখান গামছা জুটেনি? পাট বেচবার সময় কিছু টেকা হয়। কিন্তু খাজনা আর মাহাজন সাম্লাইতে সব শেষ। কত চাষায় তখন জমি বেচে। তোম্রা-তারার দোয়ায় অখন অব্ধি আমার জমিতে হাত পড়ছে না। পরে কি হইব কওন যায় না।’
‘এই কামও কইর না বাহারুল্লা ভাই। জান্ থাকতে জমি ছাইড় না। মালোগুষ্টির কথা আল্গা। তারা জলের উপ্রে জলটুঙ্গি বাইন্ধা আছে। জোয়ারে বাড়ে ভাটায় কমে, জলের আবার একটা বিশ্বাস। মাটির সাথে সম্বন্ধ-ছাড়া মানুষের জীবনের কোন বিশ্বাস নাই, বাহারুল্লা ভাই।’