পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৫৫

অশেষ চেষ্টায় ঠিক করিতে করিতে বুড়ি জিজ্ঞাসা করিল, ‘জামাই আইল কোন খান থাইক্যা, না কইলে কেম্‌নে বুঝি কও।’

 ‘যাত্রাবাড়ির জামাই। বসন্তর বাপ।’

  ভাগ্‌নী-জামাই। দেশদেশান্তরে মান্য করে। ভাগ্‌নী মরিয়া গিয়াছে। তাই এবাড়িতে আর আসা-যাওয়া নাই।

 বুড়ির মাথা কিঞ্চিৎ পরিষ্কার হওয়ার পর ঘোমটা টানিয়া দেওয়ার কথা মনে পড়িল।

 রাতের স্তব্ধতা ভেদ করিয়া অনেক দূরে মোরগ ডাকিয়া উঠিল। যারা খাটিয়া খায় ইহা তাদের নিকট ব্রাহ্মমুহূর্ত। এই সময়ে চাষীর মেয়েরা ধানসিদ্ধ করিবার জন্য উনুনের মুখে আগুন দেয়। মালোর মেয়েরা চোখে মুখে জল দিয়া শণসূতা কাটিতে বসে। পুরুষেরা যারা আগ-রাতে যায় নাই, এই সময়ে জাল-কাঁধে রওনা হয়।

 কাঁধে জাল হাতে হুকা রামকেশব বাহিরে পা দিতে দিতে বলিল, ‘মাত্‌বরের পুত্, আইজ কিন্তু যাইও না।’


 প্রতিটি ঘরের আঙ্গিনাতে রোদ নামিয়াছে। সকালের সোনালি রোদ। কারো বৌ-ঝি বসিয়া নাই। কারো ছেলেমেয়ে বিছানায় পড়িয়া নাই। তারা আঙ্গিনায় নামিয়া পড়িয়াছে। মায়েদের শাড়ি দুই ভাঁজ করিয়া গা ঢাকিয়া গলাতে বাঁধা ছিল। রোদ পাইয়া খুলিয়া দিয়াছে। খালি গায়ে এখন খেলাতে মগ্ন। কালোতে ফরসাতে মেশা সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল শিশুর দল।