পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
তিতাস একটি নদীর নাম

উপরে রঙ লাগাইব, নানান রঙের রঙ। যেদিন চক্ষুরদান হইব, সেইদিন কাম সারা। পূজা হইব সেইদিন রাইতে।’

 সুবিজ্ঞ সাথীর আশ্বাস অন্তরে নিয়া অনন্ত পরের দিন গেল। কিন্তু নিরাশ হইল। পাল খাটাইয়া মণ্ডপের সামনাটা ঢাকিয়া দিয়াছে। কারিগরদের যাওয়া-আসার জন্য একটুখানি ফাঁক আছে এক কোণে। সেখানে চোখ ডুবাইয়া দেখা গেল ছোট ছোট অনেক বাটিতে অনেক জাতের রঙ গোলা রহিয়াছে। সেই রঙে তুলি ডুবাইয়া কারিগরেরা দ্রুত বেগে চালাইতেছে, আর প্রতিমা প্রতিক্ষণে নব নবরূপে বিচিত্র হইয়া উঠিতেছে।


 কালোর-মা-ই নির্দিষ্ট করিয়া দিল, কাল যে কালীপূজা হইবে, তাতে কালোর-মা, অনন্তর-মা আর বৃন্দার-মা সংযমী থাকিবে। সংযমী যারা থাকে তারা আগের দিন নিরামিষ খায়, পূজার দিন প্রাতঃস্নান করে। পূজার জল তোলে, ফুল বাছাই করে, ভোগ নৈবেদ্য সাজায় আর ফুলের মালা গলায় নামাবলী গায়ে যে পুরোহিত পূজায় বসে তার নির্দেশ মতো নানা দ্রব্য আগাইয়া দেয় এবং প্রতিমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত নানা কাজ করে। কম গৌরবের কথা নয়। তারা পুরোহিতের সাহায্যকারিণী। অর্ধেক পূজা তারাই সমাধা করে। পুরোহিত তো কেবল মন্ত্রের জোরে। অনন্তর মার গৌরব বাড়িল। কিন্তু সুবলার বৌয়ের জন্য দুঃখ পাইল। সে এসব কাজে কত পাকা অথচ কালোর মা তাকেই কিছু বলিল না।