ঘরের মত খাড়া করিয়া সামনের দিক খোলা রাখিয়া আর তিনদিক চটে মুড়িয়া দিয়াছে। পূজা হইবে অনেক রাতে। ছেলে বুড়া অনেকেই কাঁথা নিয়া আসিয়া সেই ঘরের চটের ঢালা বিছানার উপর এখনই শুইয়া পড়িয়াছে। সেই ঘর আর মণ্ডপের মাঝামাঝি স্থানে মোটা মোটা আমের কাঠ দিয়া সারা রাতের মত আগুনের ধুনি করিয়াছে। ইহাকে ঘিরিয়া দশ বার জনে গায়ে গা ঠেকাইয়া বসিয়াছে। হাঁড়ি ভরা তামাক টিকা কাছেই আছে। পাঁচ ছটা হুকা জ্বলিতেছে নিবিতেছে। আগুনের তাপে আর তামাকের ধকে তারা একসঙ্গে উত্তাপিত হইতেছে।
এদের সকলেরই দেহে বয়সের ছাপ। কান পর্যন্ত ঢাকিয়া মাথা বাঁধা। কারো কারো গায়ে সুতি-কম্বল, অনেকের গায়ে কাঁথা। তার উপর মুখে দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল। এই তীব্র আলোকের উজ্জ্বলতায় তাহাদিগকে অপার্থিব দেখাইলে তাহা অনন্তর চোখের দোষ নয়। তাদেরই একজনের আহ্বানে অনন্ত ধীরে ধীরে দ্বিধা-সঙ্কুচিত চিত্তে তার কাছে গিয়া দাঁড়াইল।
‘শীত করে?’
অনন্ত ঘাড় কাত করিয়া জানাইল, ‘করে।’
‘পিরাণ নাই?’
মাথা নাড়িয়া জানাইল, নাই।
‘ইখানে বইয়া পড়্। শরতকাকা, একটু ঘুইরা বও। জাগা দেও। কাঁপ্তাছে।