তার। তারপর একদিন সে মরিয়া গিয়াছিল। সে মরিয়া গিয়া গৌরাঙ্গকে বাঁচাইয়াছে। তার কথা গৌরাঙ্গসুন্দরের আর মনে পড়ে না। তারই মত শুকাইয়া-যাওয়া তারই হাতের ডালিম গাছটা চেখে পড়িতে আজ মনে পড়িয়া গেল। উঃ, বউটা মরিয়া কি ভালই না করিয়াছে! থাকিলে, আজ তার অবস্থা হইত ঠিক নিত্যানন্দদাদার মত।
নিত্যানন্দ থাকে উত্তরের ঘরে। তার বউ আছে। আর আছে একটি ছেলে, একটি মেয়ে। নিত্যানন্দ-পরিবারের দিকে চাহিয়া গৌরাঙ্গ শিহরিয়া উঠে! একপেটের ভাবনা নিয়াই বাঁচি না, দাদা চারিটা পেটের ভাবনা মাথায় করিয়া কেমন তামাক খাইতেছে। তার যেন কোন ভাবনাই নাই।
সত্যি নিত্যানন্দর আর কোন ভাবনা নাই। যতই ভাবিয়াছে, দেখিয়াছে কোন কূল-কিনারা পাওয়া যায় না। বৌ ঝিমাইতেছে। ছেলেমেয়ে দুইটা নেতাইয়া পড়িয়া কিসের নির্ভরতায় অক্ষম নিত্যানন্দর মুখের দিকে চাহিয়া আছে। আর নিত্যানন্দ কোন উপায় না দেখিয়া কেবল তামাক টানিতেছে।
পশ্চিমের ভিটায় গৌরাঙ্গসুন্দরের ঘর। ডালিম গাছে কাঁধের জাল ঠেকাইয়া দিয়া ডোলাটা ছুঁড়িয়া ফেলিল দাওয়ার একদিকে। দক্ষিণ ও পূর্বদিকের ভিটা খালি। তাদের দুই কাকা থাকিত। এক কাকা মরিয়া গিয়াছে এবং তার ঘর বেচিয়া তার শ্রাদ্ধ করিতে হইয়াছে। আরেক কাকা ঘর ভাঙ্গিয়া লইয়া আরেক গাঁয়ে ছাড়িয়া গিয়াছে।