পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
তিতাস একটি নদীর নাম

 এর ব্যতিক্রম কেবল রামকেশবের ঘর। যার ঘরে নিত্য নিরানন্দ, আনন্দাবসানের দুঃখের আঁধার সে-ঘরে দুলিয়া উঠে না। ঘনাইয়া আসে না শ্রান্তির অবসন্ন কালে মেঘ।

 গরীব বলিয়া মাতব্বরেরা বলিয়াছিল, ‘রামকেশব, তোমার পাগলার চাঁদা বাদ দিলাম। তোমার চাঁদা দিয়া দেও।’

 তারা লণ্ঠন লইয়া উঠানে বসিয়াছে। দিবে-না বলা চলিবে না। তাদের হাতে হুকা দিয়া রামকেশব ডাক দিল, ‘মঙ্গলারে, অ মঙ্গলা, তুই না জাল কিন্‌তে চাইছিলি, টাকা থাকে ত লইয়া আয়।’

 ঝড়ের ঢেউ বুকে করিয়া জালটা বাহির করিলে যার হাতে চাঁদার কাগজ ছিল সে বলিল, ‘জালটা অখন বেইচ্চ না কিশোরের বাপ। তোমার চান্দা ছাড়াও পূজা হইব, কিন্তু জাল বেচলে আবার জাল করতে দেরি লাগব। আমি মাত্‌বররারে সামঝামু।’

 এ জন্য রামকেশবের মনে একটা সঙ্কোচ ছিল। চাঁদা দিবে না অথচ পূজার প্রসাদ খাইবে। পরের চাঁদায় গান হইতেছে। সে গান যে বসিয়া বসিয়া শুনিবে, লোকে তার দিকে চাহিয়া কি মনে করিবে।

 পূজার একরাত ও গানের চারদিন চাররাত সে পাগলকে ঘরে বাঁধিয়া রাখিল। এবং নিজে না দেখিল পূজা, না পাইল প্রসাদ, না শুনিল গান। চাররাত ধরিয়া খালের মুখে একটানা জাল পাতিয়া রাখিল। তাহাতে সে প্রচুর মাছ পাইল এবং চড়া দামে বেচিয়া কিছু টাকা পাইল। কিন্তু গরীবের হাতে