পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৮৫

বন্ধ দুয়ার দেখিয়া সে আর দাঁড়াইল না, বারান্দায় গিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল।


 মঙ্গলার বৌয়ের সহসা নিশি রাতে গল্প শুনিবার সাধ হইল। অনন্তর মাকে ধরিয়া বসিল, ‘একখান পরস্তাব কও ভইন। নতুন দেশের নতুন মানুষ তুমি। অনেক নতুন পরস্তাব তুমি শুনাইতে পারবা।’

 অনন্তর মা একটু ভাবিয়া দেখিল: তার নিজের জীবনে এত বেশি ‘পরস্তাব’ জমিয়া আছে, আর সে ‘পরস্তাব’ এত বিচিত্র যে, ইহা ফেলিয়া কানে-শোনা ‘পরস্তাব’ না বাঁধিবে দানা, না লাগিবে ভাল, না পারিবে দরদ দিয়া বলিতে। তার নিজের জীবনের বিরাট কাহিনীর নিকট আর যত সব কাহিনী তো নিতান্ত তুচ্ছ। কিন্তু এ কাহিনী তো এখানে বলিবার নয়। শুধু এখানে কেন, কোনোখানেই বলিবার নয়। এ কাহিনী নিজে যেমন কুলকিনারাহীন, এর ভবিষ্যৎও তেমনি কুলকিনারাহীন। এ কাহিনী সহজে কাউকে খুলিয়া বলা যায় না, কিন্তু গোপন করিয়া সহিয়া থাকিতে অসীম ধৈর্য, কঠোর আত্মসংযম লাগে। তাকে না বলিয়া মনের গোপনে লুকাইয়া রাখার জন্য মনের উপর অনেক বল প্রয়োগ করিতে হয়। তবু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়া রাখিয়াছে, যদি কোন দিন চূড়ান্ত সময় আসে সেদিন বলিবে, তার আগে বুক যতই মুচড়াইয়া দুমড়াইয়া ভাঙ্গিয়া চুরিয়া থাক সেখানেই উহাকে সযত্নে সংগোপনে লুকাইয়া রাখিবে।