পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৮৭

 সুবলার বউ একটু থামিয়া আবার বলিতে লাগিল—

 পাগল আর বন্ধু যখন ছোট ছিল একজনের মা তখন তাদের দুজনকেই খুব ভালবাসিত। একজন তখন ন’দশ বছরের মেয়ে। মাঘমণ্ডলের দিনে দুই বন্ধু তার চৌয়ারি বানাইয়া দিয়াছিল। সেইদিন মা ঠিক করিয়া রাখিল দুইজনের যে-কোন জনকে মেয়ে সঁপিয়া দিবে। শেষে স্থির করিল বড়জনই বেশি ভাল, তাকেই মেয়ে দিবে। সে যেদিন পাগল হইয়া ফিরিয়া আসিল সেদিন মত গেল বদলাইয়া। মেয়ের বাপ তখন পাগলের বাপকে খালি এড়াইয়া চলিতে চায়। পাগলের বাপ ডাকিয়া বলে, তুমি আমাকে এড়াইয়া চল কেন। বাজারে যাইতে আমার উঠান দিয়া না গিয়া রামগতির উঠান দিয়া ঘুরিয়া যাও কেন। আমি কি জানি না, আমার কপাল ভাঙ্গিয়াছে। পাগলের নিকট বিয়া দিতে আমি কেন তোমাকে বলিব। তারপর একদিন ঢোলঢাক বাজাইয়া মেয়ের বিয়া হইয়া গেল। কার সঙ্গে হইল জানি, কিন্তু বলিব না।

 —আরও জানি। বিয়ার পর বন্ধু গেল জিয়লের ক্ষেপ দিতে। বড় নদীতে একদিন রাত্রিকালে তুফান উঠিল। নৌকা সাঁ সাঁ করিয়া ছুটিয়াছে, মানাইতে পারে না। মালিকেরা চতুর মানুষ। তারা নিজে কিছু না করিয়া, যাকে জন খাটাইতে নিয়াছে বিপদ আপদের কাজগুলি সব তাকে দিয়াই করায়। নৌকা তীরে ধাক্কা খাইয়া চৌচির হইবে। তার আগেই ত নৌকার পাঁচজনে তীরে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া হাত দিয়া, কাঁধ লাগাইয়া পিঠ ঠেকাইয়া নৌকার গতিরোধ