থাকে না তার মাথায় ঘোমটা। ছইয়ের বাহিরে বসিয়া ঘাটগুলির দিকে চাহিয়া থাকে সে। স্বামীর বাড়ির ঘাট অদৃশ্য না হইলে কিন্তু সে ছইয়ের বাহিরে আসে না।
তারা স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আর বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যায় অনেক হাসি-কান্নার ঢেউ বুকে লইয়া। যে বৌ স্বামীর বাড়ি যায়, তার এক চোখে প্রজাপতি নাচে, আরেক চোখে থাকে জল। এরা সব ভিন্ জাতের বৌ। বামুন, কায়েত, নানা জাতের। জেলেদের বৌরা জেলে-নৌকাতেই যায়। তারা অত সুন্দরীও নয়। অত তাদের আবরুরও দরকার হয় না। কিন্তু ওরা খুব সুন্দরী। জেলের ছেলেরা কপালের দোষ দেয়। অমন সুন্দর বৌ তাদের জীবনে কোনদিন আসিবে না। ভালো করিয়া চায় তারা। ভালো করিয়া চাহিতে পারিলে প্রায়ই ছইয়ের ফাঁক দিয়া, বাতাসে শাড়িটা একটু সরিয়া গেলে, চকিতে তারই ফাঁক দিয়া, টুকটুকে একখানা মুখ আর এক জোড়া চোখ চোখে পড়িবে। বৌয়ের অভিভাবক ছইয়ের দুই মুখে গুঁজিয়া দিয়াছে শাড়ির বেড়া; তাতে বৌকে সকলে দেখিতে পারে না, কিন্তু বৌ সকলকে দেখিতে পায়। তিতাসের জলে অনেক মাছ। মালোর ছেলের স্ফুর্তি রসাইয়া ওঠে। জালের দিকে চোখ রাখিয়াই গাহিয়া ওঠে, ‘আগে ছিলাম ব্রাহ্মণের মাইয়া করতাম শিবের পূজা, জালুয়ার সনে কইরা প্রেম কাটি শণের সূতা রে, নছিবে এই ছিল।’ বৌ ঠিক শুনিতে পাইবে।
গ্রামের পর খাল। নৌকাখানা সেখানে ঢুকিয়া পড়ে।