পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
তিতাস একটি নদীর নাম

ছায়া লাগানো। পশ্চিমের সূর্যের সাত রঙ পূবের আকাশের মেঘলার ফাঁদে ধরা পড়িয়া গিয়া উঠাইয়াছে এই রামধনু।

 মাত্র ঘণ্টা দুই আগে যে বৃষ্টি হইয়াছে তেমন প্রচণ্ড বৃষ্টি খুব কমই দেখা যায়। নৌকাতে থাকিয়া ততটা বোঝা যায় না। বাড়িতে থাকিলে দেখা যাইত ঘরের চালের ঝম্‌ঝম্ শব্দে কান ফাটিয়া যাইতেছে; চাল-বাহিয়া-পড়া একটানা বৃষ্টির জলে ছাঁচে লম্বা এক সারি গর্ত হইয়া গিয়াছে। কোথায় কোন নালা আটকাইয়া গিয়া উঠান জলে ভরিয়া গিয়াছে, তুলসীতলার উঁচু মাটিটুকু বাদে ভিটার নিচের সবটুকু জায়গা ডুবিয়া গিয়াছে; উঠানের কোণে অযত্নে যে-সব দূর্বাঘাস গজাইয়াছিল, সেগুলি জলে সাঁতার কাটিতেছে।

 খালটা শুকনা ছিল। আজিকার ঢলে মাঠময়দান ভাসিয়াছে, হালদেওয়া ক্ষেতগুলির ভাঙ্গা ভাঙ্গা মাটি ঢলে গুলিয়া গিয়া কাদা হইয়াছে। সেই কাদাগোলা জল আল উপছাইয়া পড়িয়াছে আসিয়া খালে। শতদিক হইতে শত বাহু বাড়াইয়া দিয়া ক্ষেতের খালের দৈন্যদশা প্রাচুর্যে পূর্ণ করিয়া দিয়াছে। খালে তখন উজানের ঠেলা। যে-খাল আগে নদীর জল টানিয়া নিয়া কোনোরকমে শুকনা গলা ভিজাইয়া রাখিত, আজ সে খাল উল্লোলিত, কল্লোলিত, উথলিত হইয়া স্রোত বাঁকাইয়া ঢেউ খেলাইয়া বুক ফুলাইয়া তার ভরা বুকের উপচানো জল তিতাসের বুকে ঢালিয়া দিয়াছে। বৃষ্টি থামিয়া গিয়াছে অনেকক্ষণ, কিন্তু সে দেওয়া এখনও থামে নাই। এখনও ধারায় ছুটিয়া আসিতেছে সেই কাদাগোলা জল।