পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২৩১

 কাদিরের পিপাসা হইয়াছিল। আঁজলা ভরিয়া তুলিয়া মুখে দিতে গিয়া দেখে অর্ধেক তার মাটি। বনমালী দেখিতে পাইয়া দয়ার্দ্র হইয়া উঠিল; ‘থইয়া দেও, খাইতে পারবা না। খালের জলে গাঙের জলেরে খাইছে। মালো-পাড়ায় আমার কুটুম আছে। আলু তোলার পর নিয়া যামু তোমারে।’

 ‘কি কুটুম? সাদি সম্বন্ধ করচ্ না কি।’

 ‘না। ভইন বিয়া দিছি।’


 বনমালীর সাহায্য পাইয়া কাদিরের সব আলু একদণ্ডের মধ্য হাটে গিয়া উঠিল। চারিদিকে ছড়াইয়া না পড়ে এইজন্য কাদিরের ছেলে জলো-ঘাসের ন্যাড়া বানাইয়া আলুর গাদার চারিপাশে গোল করিয়া বাঁধ দিল। সেই বাঁধ ডিঙ্গাইয়া দুই চারিটা ছোট ছোট আলু এ-পাশে ও-পাশে ছিটকাইয়া পড়িতে লাগিল। আর সেগুলি মালিকের অধিকারের বাইরে মনে করিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়া ধরিতেছিল কতকগুলি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। ভিখারীর ছেলে নয়, কিন্তু দেহের আকারে, বসনের অপরিচ্ছন্নতায় ও অপ্রাচুর্যে এবং অস্বাভাবিক কাঙ্গলপনায় সেগুলিকে মনে হইল যেন ভিখারীর বাড়া। ইহারা সবখানেই আছে, সব দেশে সব গাঁয়ে আর সব গাঁয়ের বাজারে। কাদিরেরা যারা আলু বেচিতে আসে তারা অমন দুই চারিটা আলুর জন্য ইহাদিগকে ধমক দেয় না, কিছু বলেও না। তাদের কত আলু, নিক না দুইচারিটা এই সব দুঃখীর ছেলেপিলে। পয়সা দিয়া ত কিনিতে পারে না। কিন্তু