দেখিতে চোখে প্রায় পুরানো হইয়া গিয়াছে। কিন্তু এদেরই রহস্য ভেদ এখনও করা হয় নাই। অলৌকিক রহস্যভরা অনন্তর আকাশ-ভুবন। আজও তাদেরই একটা অদেখা রহস্যজনক বস্তু তার চোখের সামনে নামিয়া আসিয়াছিল পিছনের অনেক দূরের আকাশ হইতে, অদেখার কোল হইতে একেবারে নিকটে, আমিনপুরের জামগাছটার প্রায় মাথার কাছাকাছি।
বনমালীর মন হইতেও কল্পনার রামধনু মুছিয়া গেল; কেউ বুঝি নামাইয়া দিল তাকে বাস্তবের মুখে। ছেলেটার গায়ের রঙ ফর্সা। কিন্তু খড়ি জমিয়া বর্ণললিত্য নষ্ট করিয়া দিয়াছে। এক চিলতা সাদা মাঠা-কাপড় কটিতে জড়ানো। আর এক চিলতা কাঁধে। বিঘৎ পরিমাণ একখানা কুশাসন ডানহাতের মুঠায় ধরা। নৌকা গড়িবার সময় তক্তায়-তক্তায় জোড়া দেয় যে দুইমুখ সরু চ্যাপ্টা লোহা দিয়া, তারই একটা দুইমুখ এক করিয়া কাপাস সূতায় গলায় ঝুলানো। পিতামাতা মারা যাওয়ার পর মাসাবধি হবিষ্য করার সন্তানের এই সমস্ত প্রতীক।
বনমালী দরদী হইয়া বলে, ‘তোর নাম কি রে।’
‘অনন্ত।’
‘অনন্ত কি? যুগী, না পাটনী, না সাউ, না পোদ্দার?’
অনন্ত এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারিল না।
‘তোর মা মরছে না বাপ মরছে?’
‘মা।’