দুই-এক আনা ফেলিয়া দিলেই মাঝি খুশি হইয়া চলিয়া যায়। বুড়া মাঝি। যা খাটিয়াছে! সঙ্গে মাত্র দুই ননদ। তাও ননদের ছোট সংস্করণ! সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিয়াছে। ভয় করে না বুঝি! লোকটা যেন কি! তাদের অসিতে বলিয়া নিজে অসিতেছে না। বাড়ির পথে বড় বড় ঘাস। সাপ বাহির হইয়াছে হয়ত। ব্যাঙ্ মনে করিয়া এখনই জমিলার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে যদি ছোবল দেয়!
ছমির মিয়া হিসাবী লোক। কাউকে এক পয়সা ঠকায় না। বেহুদা কাউকে এক পয়সা বেশিও দেয় না। সব কাজ ওজন করিয়া করে। মাঝি হার মানিয়া নৌকায় গিয়া উঠিলে, ছমিরের মনে অনাহূত এক ছোপ প্রসন্নতা রঙ গুলাইয়া দিল। আজ তার কিসের রাত! এ রাতে কেউ কোন দিন মাঝিকে ঠকায়! কেউ যেন না ঠকায়!
মাঝি দশ মিনিট ঝগড়া করিয়া যাহা পায় নাই, এক মিনিট চুপ করিয়া তাহার চারিগুণ পাইল। চক্চকে সিকিটা শাদা নদীর খোলসা অল্প আলোকে ভালো করিয়া দেখিয়া লইয়া লগিতে ঠেলা দিল।
ছমির কাছে আসিলে জমিলার মনে হইল—এতক্ষণ এতগুলি সাপ তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটিকে ঘিরিয়া কিল্বিল্ করিতেছিল, এখন সব কয়টা সরিয়া পড়িয়াছে। কি ভাল তার মানুষটি!
কিন্তু তার চাইতেও ভাল একজনকে সে দেখিয়া আসিয়াছে সেই মালোপাড়ার ঘাটে। বড় ভাল লাগিয়াছে তার মানুষটাকে।