পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২৫৯

যেমন লম্বা বাঁশের আগায় জাল বাঁধিয়া খালের দুই পাড় আগ্‌লাইয়া জাল পাতে, তারই অনুকরণে রাস্তার দুইধার বন্ধ করিয়া দুইটি কঞ্চিতে দড়ি আর সূতা বাঁধিয়া জাল পাতিয়া বসিয়াছে। পায়ের গোড়ালির চাপে কঞ্চির আগা উঁচাইয়া, দড়ি টানিয়া, বুক চিতাইয়া, যেন কত মাছই জালে উঠিয়াছে এমন একটি ভাব-ভঙ্গিতে না-দেখা মাছ সব ঝাড়িয়া ফেলিতেছে। অনন্তকে তারা একসাথে ডাক দিয়া তার দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। দৌড়িয়া আসিয়া অনন্ত সকৌতূহলে বলিল, ‘কি মাছ উঠেরে?’

 ‘এই তর চান্দা বৈচা, তিত্-পুঁটি। জব্বর মাছ উজাইছে, আইজকার ঢলে।’

 অনন্ত ও তাদের সঙ্গে মাছ-ধরার খেলায় মাতিয়া গেল।

 কতক্ষণ এই খেলা চলিল। শুধুই খেলা। মেয়েরা যেমন মাটির ভাত রাঁধিয়া রাঁধা-রাঁধা খেলা করে, তেমনি এ মাছ-ধরা-ধরা খেলা।

 সহসা তাদেরই একজন আবিষ্কার করিল একটা সত্যিকারের কৈ মাছের বাচ্চা কান্‌কো আছড়াইয়া উজাইবার চেষ্টা করিতেছে। সব কয়টি দস্যিছেলে একসঙ্গে হৈ হৈ করিয়া ছুটিয়া গিয়া মাছটিকে লুঠ করিয়া আনিল। তারপর দেখা গেল—একের পর এক ছোট বড় কৈ মাছ স্রোত ঠেলিয়া উজাইতেছে। অনন্তর দলের তখন মহা স্ফূর্তি। যার পরণে যা ছিল, তারই কোঁচড় করিয়া তারা ইচ্ছামত কৈ মাছ ধরিল। ধরিতে ধরিতে বেলা ফুরাইয়া গেল। রাস্তার জলের স্রোতটুকু