পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৮
তিতাস একটি নদীর নাম

 ঘাটের কাছে অনেক নারী গিয়া জমিয়াছে। সাহা পাড়ার এক নারি ঝাকুনি মারিয়া কলসী কাঁকালের উপরে তুলিতে তুলিতে মালো পাড়ার এক নারীকে বলিল, ‘কারে কে লইয়া যাইতাছে গো দিদি!’

 —লবচন্দ্রর বউ উদয়তারাকে তার দাদা বনমালী নিতে আসিয়াছিল, নিতেছে। আমার বাপের বাড়ি আর তার বাপের বাড়ি এক গাঁয়ে, পাশাপাশি ঘর।

 ‘বুঝলাম।’

 নারীদের দলে গিয়া সুবলার বউও দাঁড়াইল। দেখিল, দুই জনেই মহা খুশি। উদয়তারা মাঝে মাঝে ছড়া কাটিয়া রঙ্গ করিতেছে আর অকৃতজ্ঞ কুকুরটা খুশি মনে এদিক ওদিক চাহিয়া দেখিতেছে।

 উদয়তারা এখন আর লবচন্দ্রের বউ নহে; এখন সে বনমালীর বোন। গর্বিত দৃষ্টিতে ঘাটের নারীদের দিকে চাহিল সে। একটি বৌ ম্লান মুখে তাকাইয়াছিল উদয়তারার দিকে, তারও বাপের বাড়ি নবীনগর গ্রামে। তাকে খুশি করিবার জন্য উদয়তারা ডাকিয়া বলিল, ‘কিগো নবীনগরের ছবি না, বহু দিন ধইরা যে দেখি না?’

 উদয়তারাকে যারা জানে তারা সকলেই হাসিয়া উঠিল।

 সে বৌও অমনি ফিক করিয়া হাসিয়া বলিল, ‘জামাই-ঠকানী, কি কয় লা?’

 এই কয়জনার হাসি-তামাসার মধ্যে বনমালীর নৌকা তিতাসের জলে ভাসিয়া পড়িল।