পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭২
তিতাস একটি নদীর নাম

যাও, নিকট দিয়া যাইতেছিল, দুই হাত বার-পানি দিয়া আবার পাল্লা ধরিবে, তবু তারা যাইবেই। ঘাটে অত্যধিক মানুষের আলোড়ন থাকে যখন, তারা গাছগাছড়ার খোপেখাপে দলে দলে তিষ্ঠাইতে থাকিবে। বেশী বার-পানি দিয়া যাইতে পারে না; ছোট মাছের অগাধ জলে বিষম ভয়, ঘাটের এধারে তারা দলে ভারী হইতে থাকিবে। ঘাট ঠিক চুপ হইলেই আবার যাত্রা শুরু করিবে। কেউ আটকাইয়া রাখিতে পারিবে না।

 ঘাটে কেহ নাই। সুবলার বউ আঁচল পাতিয়া কয়েকটি মাছ তুলিয়া ফেলিল। তারা পুঁটিমাছের শিশুপাল। কাপড়ের বাঁধনে পড়িয়া ফরফরাইয়া উঠিল। জলছাড়া করিবার প্রবৃত্তি হইল না। আঁচল আলগা দিয়া ছাড়িয়া দিল। খলসে বালিকারা কেমন শাড়ি পরিয়া চলিয়াছে। চাঁদার ছেলেরা কেমন স্বচ্ছ—এপিঠ ওপিঠ দেখা যায়। সারা গায়ে বিজল। ধরিলে হাতে আঠা লাগে। একটা ঘন ছোট জাল পাতিয়া অনন্ত ইহাদের সবগুলিকেই ধরিতে পারিত!

 আরও কিছুদিন পরে গলা-জলে জল-বন গজাইয়াছে, আঁকিয়া বাঁকিয়া ঘন হইতে ঘনতর হইয়া সেগুলি মাছেদের এক একটা দুর্গে পরিণত হইয়াছে। মালোর ছেলেরা তখন বসিয়া নাই। বড়রা নৌকা লইয়া মাঝ নদীতে নানা রকমের জাল ফেলিতেছে তুলিতেছে, ছোটরা ছোট ছোট তিনকোণা ঠেলা জাল লইয়া সেই জলদুর্গে অবিরত খোঁচাইয়া চলিয়াছে। কয়েকবারের খোঁচার পর জালখানা টানিয়া মাটির উপর