পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
তিতাস একটি নদীর নাম

বিলম্ব হইল না। সে প্রস্তাব করিল: বিষ্ণুপুরের বিধুভূষণ পাল আমার মামা। সমবায় ঋণদান সমিতির ফিসারী শাখার ম্যানেজার। ফিসারীর টাকা নিয়া সব মালোরা গিলিয়াছে। মাছে যেমন টোপ গিলে তেমনিভাবে গিলিয়াছে, আর উগ্‌লাইয়া দিতে পারিতেছে না। সুদ কম বলিয়া, লোভে লোভে ধার করিয়াছিল। এখন চক্রবৃদ্ধি হারে সুদে আসলে বাড়িতেছে। জানইত সমবায় সমিতির টাকা কত অত্যাচার করিয়া আদায় করা হয়। মামাকে গিয়া জানাইয়া দেই, প্রত্যেক মালোকে যেন ব্যাঙ্‌নাচানী নাচাইয়া ছাড়ে।

 কিন্তু এ প্রস্তাবও কারো মনঃপূত হইল না। মামা কখন আসিবে কে জানে! বড় সুদূর-প্রসারী প্রস্তাব। গরম গরম কিছুই করা হইল না। শেষে একটা প্রস্তাব তুলিল রজনী পালের ভাই: যে-মাগী তাকে ডাকিয়া ঘরে নিয়াছিল, তাকে ধরিয়া নিয়া আস, কয়েক পাইট মদ কিন, তারপর নিয়া চল ভাঙ্গা কালীবাড়ীর নাটমন্দিরে। কিন্তু ব্যাপার আপাততঃ এর বেশি আর গড়াইল না। তেলিপাড়া ও মালোপাড়া উভয় পাড়ার প্রস্তাবই প্রস্তাবে পর্যবসিত হইল। তবে মালোপাড়ার সঙ্গে আর সব পাড়ার একটা মিলিত বিরোধের যে-গোড়াপত্তন সেইদিন হইয়া থাকিল, তাহা আর উৎপাটিত হইল না।


 পথে রাত হইয়া গেল। বর্ষার প্রশস্ত নদীর উপর মেঘভরা আকাশের ছায়া দৈত্যের মত নামিয়া পড়িয়াছে। অনন্ত বসিয়া