সাহসে আমাকে কিনিয়া নিতে চায়।—অনন্ত এই কথা কয়টি মনে মনেই ভাবিল। প্রকাশ করিয়া বলিল না।
অনন্ত ও অন্যান্য পুরুষ মানুষদের খাওয়া হইয়া গেলে তিন বোনে এক পাতে বসিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া খাইল। তারপর পাশের ঘরে তিন পুরুষের বিছানা করিয়া দিয়া, অনন্তকে এ ঘরে শোয়াইয়া, তিন বোনে পিঠা বানাইতে বসিল।
রাত অনেক হইয়াছে। প্রদীপের শিখা তিন বোনের মুখে হাতে কাপড়ে আলো দিয়াছে। পিছনের বড় বড় ছায়া দেওয়ালে গিয়া পড়িয়াছে। ভাবে বোঝা গেল, তারা আজ সারারাত না ঘুমাইয়। কাটাইবে।
‘ঘুম আইলে কি করুম?’ ছোট বোন জিজ্ঞাসা করিল।
‘উদয়তারা শিলোকের রাজা। শিলোক দেউক, আর আমরা মান্তি করি—ঘুম তা হইলে পলাইব।’ বলিল বড় বোন।
উদয়তারা একদলা কাই হাতের তালুতে দলিতে দলিতে বলিল, ‘হিজল গাছে বিজল ধরে, সন্ধ্যা হইলে ভাইঙ্গা পড়ে—কও, এই কথার মান্তি কি?’
‘এই কথার মান্তি হাট।’ বলিল আসমানতারা।
‘আচ্ছা,—পানির তলে বিন্দাজী গাছ ঝিকিমিকি করে, ইলসা মাছে ঠোকর দিলে ঝরঝরাইয়া পড়ে?’
বড় বোন মানে বলিয়া দিল—‘কুয়াসা।’
এইভাবে অনেকক্ষণ চলিল। অনন্তর খুব আমোদ লাগিতেছিল, কিন্তু ঘুমের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়া পারিল না। শুনিতে শুনিতে সে এক সময় ঘুমাইয়া পড়িল।