পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২৯৫

আপনি আনত হইয়া আসিল। প্রকৃতির সঙ্গে তাহার এত নিবিড় অন্তরঙ্গতার মাধুর্য কিন্তু একজনের দৃষ্টি এড়াইল না। তুলসীতলায় প্রণাম সারিয়া সে গুন্‌গুন্ করিয়া নরোত্তম দাসের প্রার্থনা গাহিতেছিল, কাছে আসিয়া তাহার মনে হইল, অসীম অনন্ত সংসার পারাবারের ও-পারে আপনা থেকে জন্মিয়াছে যে বৃন্দাজী গাছ, প্রকৃতির একটি ছোট্ট সন্তান তাহার দিকে চোখ মেলিয়া নিজের প্রণতি পাঠাইয়া দিতেছে। কাঁধে হাত দিয়া আবেগের সহিত বলিল, ‘নিতাই, ওরে আমার নিতাই, কঙালেরে ফাঁকি দিয়া এতদিন লুকাইয়া কোথায় ছিলি বাপ। আয় আমার কোলে আয়।’

 তার বাহুর বাঁধন দুই হাতে ঠেলিতে ঠেলিতে অনন্ত বলিল, ‘আমি অনন্ত!’

 ‘জানি বাবা জানি, তুই আমার অনন্ত! অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া; আমি দান জানি না, ধ্যান জানি না, সাধন জানি না, ভজন জানি না;—কেবল তোমারেই জানি। ধরা যখন দিছ, আর ছাড়মু না তোমায়।’

 অনন্ত বিস্ময়ে অবাক!

 লোকটা সহসা সম্বিৎ পাইয়া বলিল, ‘হরি হে, একি তোমার খেলা। বারবার মায়াজাল ছিঁড়িতে চাই, তুমি কেন ছিঁড়তে দাও না? যশোদা তোমারে পুত্ররূপে পাইয়া কাঁদছিল, শচীরাণী তোমারে পুত্ররূপে পাইয়া কাঁদছিল, রাজা দশরথ তোমারে পুত্ররূপে পাইয়া কাঁদতে কাঁদতে প্রাণ দিল। তবু তোমারে পুত্ররূপে পাওয়ার মধ্যে কত তৃপ্তি, কত আনন্দ!